নিমো আব্দি দুহের হাতের উপরের অংশের পরিধি মাত্র ১২ সেন্টিমিটার। অবশ্য এই সংখ্যাটি তার কাছে কিছুই না। এটি তার চিকিৎসা করা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ভাবনার বিষয়। ইথিওপিয়ার শুষ্ক নিম্নভূমিতে যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের মধ্যে অন্যতম সে।
নিমোর মা শেমস ডায়ার বলেন, ‘আমরা খরার কবলে পড়েছি। আমাদের কাছে বাচ্চাদের দেওয়ার মতো দুধ নেই। আমার বাচ্চা খাবারের অভাবে অসুস্থ, এবং খরার কারণে এটি ঘটেছে … আমাদের গবাদি পশু খরার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা অনেক পশু হারিয়েছি। আমরা বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি।’
গৃহযুদ্ধের কারণে মানবিক সংকট চলছে ইথিওপিয়ায়। এর মধ্যেই ত্রাণকর্মী এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরেকটি সঙ্কট ধীরে ধীরে সামনে আসছে। কারণ দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব ইথিওপিয়ার বেশিরভাগ অংশে এখন চলছে প্রচণ্ড খরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে যে, মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ ৬৮ লাখের বেশি মানুষের ত্রাণ সহায়তার জরুরি প্রয়োজন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, খরা, সংঘাত ও অর্থনৈতিক মন্দার সংমিশ্রণের কারণে চলতি বছর প্রায় আট লাখ ৫০ হাজার শিশু মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে ভুগবে।
খরার কারণে ইথিওপিয়ার প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ ভয়াবহ পানি সংকটের সম্মুখীন। দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব সোমালি অঞ্চলের নিম্নভূমি এবং ওরোমিয়ার কিছু অংশ বচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমালির জিজিগায় আঞ্চলিক স্বাস্থ্য ব্যুরোর আবদি ফারাহ আহমেদ বলেছেন, এই অঞ্চলের ফসলে পঙ্গপাল আক্রমণ করেছিল। এখন বৃষ্টিপাতের অভাব – ফসল নষ্ট হচ্ছে, গবাদি পশু মারা যাচ্ছে এবং অপুষ্টি বাড়ছে। অনেক লোক তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
ডিসেম্বরে একটি সমীক্ষা অনুসারে, সোমালিতে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। চলতি বছর গুরুতর তীব্র অপুষ্টিতে (এসএএম) আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে।
সোমালি অঞ্চলের সাগলো গ্রামের সাত সন্তানের জননী জয়নাব উলি বলেন, তিনি বৃষ্টিপাতের অভাবের কারণে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি তার আয় বাড়তে ছাগল বিক্রি করতেন। কিন্তু খরায় এগুলোর অর্ধেকই মারা গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের গবাদি পশুর উপর নির্ভরশীল। আমরা অনেকগুলো হারিয়েছি। কে জানে, পরে মানুষও মরতে পারে? এমন খরা আগে দেখিনি… পাঁচ বছর আগেও আমাদের এলাকায় খরা ছিল, কিন্তু আমাদের অন্তত খাবার ছিল। কিন্তু এখন আমাদের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নেই।’