বুকের মধ্যে কেমন এক ধরনের ধপ্ আওয়াজ পাই। যেন শিহরণ বয়ে গেল সারা শরীরে। নিশা! সুন্দর নাম তো! চোহারাটা চোখের সামনেই। মনে হলো এই নামেই ওকে মানায়। যেন এ ছাড়া অন্য কোন নামই হতে পারে না এ মেয়ের। কেমন এক ধরনের নেশা নেশা বোধ। যেন ডুব দিয়ে রই তাতে। হারিয়ে যাই ভেতরে। নিঝুম রাতে এই পুরোটা কক্ষজুড়ে যেন অনুরণিত হয়ে উঠলো শব্দটা। মনে মনে আউড়ালাম, নিশা! বড় অদ্ভূত মায়াভরা শোনালো কন্ঠটা নাম বলার সময়। আমি মুগ্ধ হয়ে রইলাম। এরপর আর কথা চলেনা। যেন একরাশ নীরবতাই এ মূহুর্তের ভাষা। এক ধরনের অনির্বচনীয় ভালোলাগাবোধ নিয়ে চোখ বন্ধ করি।
না, রাতের বাকি অংশে আমরা আর কোন কথা বলি নাই। এক সময় আমি ঘুমিয়ে পরি। পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে একটু দেরীতেই। রুম অন্ধকার। রাতের মতোই। তবে চোখ খুলে মনে হলো এক নাগাড়ে অনেকক্ষন ঘুমিয়েছি। কতক্ষন জানিনা। অদুরে ভিসিআরের ঘড়িতে জ্বলছে নয়টা।
হঠাৎই মনে পরে যায় একটা মেয়ে তো আছে রুমে। ওপাশের বেডে শুয়ে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। কোন আওয়াজও পাচ্ছিনা। আছে না চলে গেছে! বুকটা ধক্ করে ওঠে। ত্বড়িতে বেড সুইচে হাত দিয়ে আলো জ্বালতে যাই। থেমে পরি। আছেই মনে হলো। চলে যাবে কেন! নিজের ইচ্ছায়ই তো আশ্রয় নিয়েছে। হয়তো এখনো জাগেনি। অন্ধকার একটু সয়ে আসে চোখে। হ্যা শুয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে। ঘুমিয়ে আছে। কি একটা পাথর যেন নেমে যায় বুকের ওপর থেকে। থাক, ঘুমাক আরো কিছুক্ষন।
উঠি কোন শব্দ না করে। সন্তর্পনে গিয়ে ঢুকি বাথরুমে। ফিরি একটুপর। দরজা খোলা লাগানোর শব্দে এ সময় ও একটু নড়ে উঠলো বোধহয়। ভাবছি রুমের আলো জ্বালানো ঠিক হবে কিনা। হ্যা জ্বালতে তো হবেই। রেডী হতে হবে। কিন্তু ওর যদি ঘুম না ভেঙ্গে থাকে। ডাকবো কি!
না আমাকে ডাকতে হলো না। ওই বললো ‘গুড মর্নিং।’ হ্যাঁ জেগেছে।
আমিও একটু হেসে বলি, মর্নিং। কেমন ঘুম হলো।
ভালো। তোমার?
লাইট জ্বালতে জ্বালতে বলি, তা বলতে পারবো না। তবে মনে হলো এইমাত্র শুলাম আর এই উঠলাম।
হেসে দ্যায়। বলে, তুমি ভাগ্যবান। এমন ঘুম ঘুমাতে পারো।
তার মানে তোমার ভালো ঘুম হয়নি! অবশ্য না হবারই কথা। নানা দূর্ভাবনা মাথায়, ভালো তো দুরের কথা ঘুমই আসার কথা না।
একটু হেসে বলে, না না। বরঞ্চ গত কয়েক রাতের মধ্যে এই রাতেই আমি ভালো ঘুমিয়েছি। বলে উঠে বসে বিছানার ওপর।
শুধাই, কোন অসুবিধা হয়নি তো?
অসুবিধা হবে কেন! প্রথম দিকে কিছু টেনশন হচ্ছিলো। তবে তোমাকে ভাবতে গিয়ে সব টেনশন চলে যায় এবং আমার ঘুম এসে যায়।
আমি চুপ হয়ে থাকি। কোন জবাব দেইনা এ কথার। তবে মনে করিয়ে দেই আমাদেরকে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিতে হবে। শুধাই, গোসল করবে কিনা।
বলে, এখন না। পরে। বলে গিয়ে ঢোকে বাথরুমে।
ওকে। হয়তো রুমে গিয়ে করবে। এখানে কাপড়চোপর নেই। পরবে কি।
ক্ষিধে লেগেছে প্রচুর। নাস্তার অর্ডার দিতে হবে। ও ফিরলে আমি যাবো গোসল করতে। ফিরতে ফিরতে নাস্তা এসে যাবে। হ্যাঁ দশটার মধ্যে রেডী হয়ে যেতে পারবো। নীচের রেস্টুরেন্টে কল করে নাশতার অর্ডার দিয়ে দেই।
একটু পরই ও ফেরে। দেখি হাতমুখটাও ধোয়নি। বলি, মনে হচ্ছে তুমি অলরেডি রেডি।
অবাক হয় যেন। বলে ‘রেডি ফর হোয়াট!’
‘টু গো।’
‘হয়্যার!’
‘হয়্যার মীনস! ইওর রুম!’
আমাকে রীতিমতো হতবাক করে দিয়ে বলে ওঠে ‘ই্ ুওয়ান্ট মি টু গো ব্যাক দ্যাট হেল এগেইন?’
‘হোয়াট!’
‘ইয়েস আই এ্যাম নট গোয়িং ব্যাক দেয়ার এনি মোর!’ একেবারে দ্বিধা জড়তাহীন কন্ঠে বলে গেলো।
তাহলে কোথায় থাকবে!
কেন, এখানে।
ঢোক গিলি। এখানে মানে, আমার এই রুমে!
তোমার কি খুব সমস্যা হবে?
কি বলছো তুমি!
একটুক্ষন চুপ থাকে। তারপর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি আমার ভগবান। ভগবানের চরনে কেউ আশ্রয় নিলে তাকে কি ঠেলে দেয়া যায়!
আমি রীতিমতো থ’ সে মূহুর্তে। বলছে কি মেয়ে! নিজের রুমে ফিরে যাবে না। থাকবে এখানে! মাথার কিছু ঠিক আছে কি!
সামলে নিয়ে বলি, তুমি এখানে থাকবে মানে! কি বলছো!
কেন, রাতে থাকলাম না! আমি তো তোমার কোন অসুবিধা করিনি তাই না?
না না সে কথা নয়। আমি একটা ছেলে তুমি একটা মেয়ে! বিপদে পড়ে এক রাত কাটানো যায়। তাই বলে-!
নিশা বলে, আমার বিপদ তো এখনো কাটেনি-।
বলি, সেটা ঠিক আছে। তাই বলে-। তুমি কি বুঝতে পারছো কি বলছো!
মাথা নীচু করে থাকে নিশা। আমি ভেবে চলি, ও যদি রুমে না ফিরে যায়, মহিলা! সে মেনে নেবে! তার সাথে একটা ভালো গন্ডগোল বেধে যাবে না! আর এক উটকো ঝামেলা। সেটা সামাল দেবো না ওর যাওয়ার ব্যবস্থা করবো!
হঠাৎ খেয়াল হয় আমিই তো জানিনা নিজে কয় দিন আছি হংকং। আজ যদি হেরিয়েল কল দিয়ে বলে কাল মিটিং, সন্ধ্যার ফ্লাইটেই উঠতে হবে। তো! ও থাকবে কোথায় আর ওকে আমার সাহায্য করারই বা কি হবে তখন!
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.