আপাতত ফুরফুরে মেজাজেই আছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। অটোয়ায় ভয়াবহ রূপ নিতে থাকা ফ্রিডম কনভয় বা ‘স্বাধীন কাফেলার’ সর্বনাশ করে পৌষ মাসের আনন্দেই আছেন তিনি। সংসদের ভেতর-বাইরে ডাবল জয় তার।
রাজধানী থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট’ বিরোধিতাকারীদের। অথচ এজন্য কোন রক্তপাত হয়নি। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে কিছুটা। উগ্র আন্দোলনকারীদের ওপর ছিটানো হয়েছে পিপার স্প্রে। ব্যস এ পর্যন্তই। বাইরে এই জয়ের পর ট্রুডো সোমবার রাতে সংসদে পেলেন জরুরি অবস্থা জারির টিকিট। টানা তিনদিন বিতর্কের পর জরুরি অবস্থার মধ্য মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর পক্ষে রায় পেলেন। ১৮৫-১৫১ ব্যবধানে জিতলেন ভোটে। অবশ্য নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সমর্থন ছাড়া সেটা সম্ভব ছিল না। প্রধান দুই প্রতিপক্ষ কনজার্ভেটিভ ও ব্লক কুইবেকওয়ার এর বিরোধিতা, তাই কোনো কাজে আসেনি। লিবারেল ও এনডিপি বলেছে, প্রয়োজনের চেয়ে একদিনও বেশি থাকবে না জরুরি অবস্থা।
আন্দোলনকারীদের তিন সপ্তাহের অবৈধ হট্টগোল শেষ। পুলিশের শান্তিপূর্ণ চেষ্টা সফল। স্বাধীন কাফেলা থেকে মুক্ত এখন কানাডার রাজধানী। মাত্র ১৯১ জনের গ্রেফতার,৭০টি ট্রাক জব্দ ও প্রায় ৪০০ মামলায় খেলা খতম। কাফেলার নেতাদের আদালত থেকে জেল মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সপ্তাহেই অনেকে বেরিয়ে আসবেন মুচলেকা দিয়ে। তারপর যেন নতুন সমস্যা না হয়, এ কারণেই বাড়তি সময় দরকার জরুরি অবস্থার জন্য।
স্বাধীন কাফেলা থেকে রাজধানী অটোয়া এখন স্বাধীন। ব্যস্ত নগরী অবশ্য এখনও ভূতের শহর। মুক্ত অটোয়ার পরিচ্ছন্ন বাতাসে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন নগরবাসী। মেয়র জিম ওয়াটসন পুলিশের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, সহসাই অটোয়াবাসী স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সুর ছিল একই। ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে প্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে। তিন সপ্তাহের আন্দোলনে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার ২০ মিলিয়ন ডলার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে।
ফ্রিডম কনভয় বা স্বাধীন কাফেলা ব্যর্থ হবে, জানা ছিল আগেই। কথা ছিল, ২২ আর ২৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্ট হিলের সামনে প্রতিবাদ করবে ট্রাক চালকরা। কিন্তু একদিন, দুদিন করে তারা কাটিয়ে দিলেন তিন সপ্তাহের বেশি। দিন-রাত হর্ণ, বিউগল বাজিয়ে, আতশবাজি পুড়িয়ে আন্দোলনের নামে ‘উৎসব’ করলেন তারা। পুলিশি বাধায় যেন না পড়েন সেজন্য নাবালক সন্তানদের সামনে রাখলেন ঢাল হিসেবে। অথচ, পুরো জাতি দুরে থাক, কানাডার সিংহভাগ ট্রাক ড্রাইভারের সম্পৃক্ততা ছিল না তথাকথিত স্বাধীন কাফেলা আন্দোলনের সঙ্গে। শ্বেতাঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো ড্রাইভারকে দেখা যায়নি কোন আন্দোলন স্থলে। অনেকেই বর্ণবাদের গন্ধ পাচ্ছেন এখানে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংবাদিক, সাধারণ জনতা সবাইকে অকথ্য ভাযায় গালাগাল করেছেন আন্দোলনকারীরা। গালাগাল শোনা এই নিরীহ মানুষদের অপরাধ (!) ছিল তারা ট্রাক চালকদের অনৈতিক আন্দোলনের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। অনেক যায়গায় পুলিশ ও সাংবাদিকরা হেনস্থা হয়েছেন আন্দোলনকারীদের হাতে।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সংবাদ সম্মলনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, শুধুমাত্র দ্বিমত প্রকাশের কারণে কাউকে আপনি অপদস্থ করতে পারেন না। এটা কানাডার আসল চেহারা নয়। পৃথিবীতে আমরা পরিচিত ভালো এবং ভদ্র জাতি হিসেবে। সত্যিই তাই। ফলে, ৯০ ভাগেরও বেশি কানাডিয়ানের সমর্থন দূরে থাক সমবেদনার ছিটেফোঁটাও ছিল না অবৈধ এই আন্দোলনের প্রতি।