বাংলাদেশ এবং কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান । উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কবি আসাদ চৌধুরীকে সাগত জানান ।
সর্বপ্রথম জনাব জহুরুল ইসলাম এফসিএ এর সাগত বক্তব্য দেয়ার পর অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা সাঈদা মারজিয়া আপরুজীকে পরিচয় করিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করেন ।
সর্ব প্রথম মহান বিজয় দিবসকে সাগত জানিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন প্রকৌশলী সিরাজ ইকবাল ।তার পর ‘বাংলাদেশের নজরুল – নজরুলের এই বাংলাদেশ’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
‘নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মম’ গান, ‘এই পবিত্র বাংলাদেশ আমাদের’, কবিতা-‘পূর্ববঙ্গ’ সহ কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্ববোধক নানা গান ও বাণীর লিখিত পোষ্টার দিয়ে সাজানো ছিল পুরো হল ।
‘নজরুলের চেতনায় বাংলাদেশের স্বপ্ন’ বিষয়ে আলোচনা সাথে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাচে অনুষ্টানটি ছিল আকর্ষণীয়ভাবে দর্শনীয়।
নজরুল ফাউণ্ডেশন কানাডার উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপন-অনুষ্ঠানের বিশেষ বৈশিষ্ট ছিল বাংলাদেশী কানাডিয়ান কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-আমাদেন নতুন প্রজন্মের- ছেলে-মেয়েদের আবৃত্তি, গানে ও নাচে স্বতঃপূর্ত অংশ গ্রহণ।
নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলী এবং তার মেয়ে রাইদা আফরোজ মিষ্টির বাংলা ও ইংরেজিতে নজরুলের ‘অগ্রপথিক’ কবিতাটি আবৃত্বি করেন । মা নুসরাত জাহান শাঁওলী বাংলায় কবিতার এক একটি স্তবক (স্ট্যাঞ্জা) আবৃত্তি করার সাথে সাথে- মেয়ে রাইদা আপরুজ মিষ্টি তার ইংলিশ অনুবাদটি শাবলীল কণ্ঠে, ভয়হীন চিত্তে আবৃত্তি করে উপস্থিত সবাইকে প্রেরণাদীপ্ত করে তুলেন।
প্রকৌশলী আবু জাফর মাহতাব এবং মনির মাহতাব-পিতা ও ছেলে ‘কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট’ নজরুলের জাগরণী গানটি দ্বৈত কণ্ঠে গেয়ে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তুলেন । একই ভাবে সাঈদা মারজিয়া আপরুজী বিদ্রোহী কবিতার এক একটি বাংলা স্তবক এবং আবরার হাবিব ইংরেজিতে তার অনুবাদ আবৃত্তি করার সময় অনুষ্ঠানটি উদ্দীপনায় উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নতুন প্রজন্মের আরও যারা নজরুলের জাগরণী কবিতা আবৃত্তি করেন তারা হচ্ছেন জাকিয়া- জহুরু ইসলাম এবং ওয়াসিফা নোশীন ।
নজরুলের ‘কুলি-মজুর’ কবিতাটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে কবিতাটি আবৃত্তি করেন কাজী আব্দুল বাসিত ।
সুমন মালিক তার আবৃত্তি-পেশাদারিত্বের সুর ও ভঙ্গিমায় আবৃত্তি করেন নজরুলের ‘আমার কৈফিয়ৎ এবং ‘বল বীর উন্নত মম শির’ কবিতা দুটি । আবু জাফর মাহতাব আবৃত্তি করেন ‘আজ সৃষ্ট সুখের উল্লাসে’ ।
নজরুল রচিত বাংলাদেশের রণ সঙ্গীত ‘চল চল চল উর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল’ গানটির ঐতিহাসিক পটভূমি এবং তার চিরন্তন প্রেরণার আবেদন নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন ডা: শিবলী নোমানি ।
হোসনে আরা জামী তার সুললিত কণ্ঠে আবৃত্তি করেন নজরুলের – অভিভাষণ ‘আর যদি বাঁশী না বাজে’।
জনাব মঈন চৌধুরী নজরুলের সাম্য ও ঐক্যের প্রেরণাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বরচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন ।
বেগম বিলকিস আবৃত্তি করেন তার স্বরচিত কবিতা এবং ফেরদাউস গুলবাহার রুনা দুটি নজরুল গীতি পরিবেশন করেন ।
সাপ্তাহিক ভোরের আলোর প্রধান সম্পাদক জনাব আহাদ খন্দকা্র নজরুলের কর্মকে নতুন প্রজন্মের নিকট পৌছানোর জন্য এজাতীয় উদ্যোগের প্রসংশা করে বক্তব্য রাখেন।
সর্বশেষে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত প্রকৌশলী শিরাজ বাহার ইকবাল তার নিজের লিখা ইংরেজী ও বাংলা দুটি বই প্রধান অথিতি কবি আসাদ চৌধুরীকে উপহার দেন ।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত প্রধান অতিথি কবি আসাদ চৌধুরী তার বক্তৃতায় কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম স্থান চুরুলিয়া সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা সহ নজরুলের জীবনের নানা অজানা দিক তুলে ধরেন । মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পিনপতন নীরবতায় উপস্থিত সবাই কবি আসাদ চৌধুরীর বক্তৃতা শ্রবন করেন । নজরুলের ‘নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মম’ গানটির প্রথম দুটি লাইন আবৃত্তি করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন ।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজন আরও যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কয়জন হচ্ছেন, অধ্যাপিকা শারমিন সুলতানা, প্রিন্সিপাল আমিনুল ইসলাম, পশ্চিম বঙ্গ থেকে আগত স্বর্ণপদক প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক সৈয়দ আখতার, অধ্যাপিকা কান্তি আখতার, কম্পিউটার প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাভিদ, অধ্যাপিকা পারভীন পিয়াস আফরুজী, অধ্যাপিকা মাহমুদা নাসরিন, ফয়জুল হক্ব সিসিপি, মাওলাসনা ভাসানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আখলাত হোসেন, জেনারেল উসমানি স্মৃতি পরিষদের সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী, প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম, আব্দুল খালেক চৌধুরী, প্রকৌশলী ইকবাল ফাত্তাহ, বাংলাদেশ সেন্টারের ডাইরেক্টর সিরাজুল ইসলাম কাজী এল এল বি প্রমূখ ।
কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের জননিরিপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার নজরুল ফাউণ্ডেশন কানাডার উদ্যোগে ৪৮তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন । সন্ধ্যা ৬: ৩০ মিনিটে নৈশভোজ পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।