সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা জেন জেমস ক্ল্যাপার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, এফবিআইএ ও এনএসএ’র তত্ত্ববধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী ভাবছে সে বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ক্ল্যাপার।
ক্ল্যাপারের মতে, পুতিন মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, বিশেষ করে গত দুই বছরে মহামারির সময়ে এবং আরও জটিল বিষয় হলো, খুব কম লোকই তার কাছাকাছি যেতে পারছে। এর ফলে আস্থা ও বিশ্বাস রাখার মতো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা খুব কঠিন। তাই তিনি যা করেন এবং প্রকাশ্যে বলেন সে বিষয়ে অনেক কিছু পড়া হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পুতিনের ছবি ও ভাষণ দেওয়ার পদ্ধতির উপর নজরদারি করছেন।
তিনি বলেন, ‘পুতিন এমন অনেক কিছু করেছেন যা ‘তার পুরোনা ঘরানার, শীতল, বাস্তববাদী ও যান্ত্রিক আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
পুতিন যুক্তিবাদী কিনা জানতে চাইলে সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ আশা করতেই পারে এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধানের, যার আঙুল রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রের বোতামে এবং তিনি যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করছেন। আমি অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি, তিনি খুব যৌক্তিক…কিন্তু আমি তার আচরণ সম্পর্কে জানি এবং তার আচরণ সম্প্রতি পরিবর্তিত হয়েছে।’
পুতিনের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিজের তৈরি করা বুদবুদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন পুতিন। এর ফলে সেই জগতে বর্হিবিশ্ব সম্পর্কে খুব কম তথ্য প্রবেশ করে, বিশেষ করে কোনো তথ্য চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এমন তথ্য প্রায় প্রবেশ করে না বললেই চলে।
মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং দ্য সাইকোলজি অফ স্পাইজ অ্যান্ড স্পাইং নামের একটি বইয়ের সহলেখক অ্যাড্রিয়ান ফার্নহ্যাম বলেন, ‘তিনি (পুতিন) নিজের প্রচার-প্রচারণার শিকার এই অর্থে যে তিনি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের কথা শোনেন এবং অন্য কারো কথা শোনেন না। এটি তাকে বিশ্ব সম্পর্কে একটি অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। ঝুঁকিটিকে ‘গোষ্ঠীগত চিন্তাভাবনা’ বলা হয় যেখানে প্রত্যেকে তার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দেয়। যদি তিনি গোষ্ঠীয় ভাবনার শিকার হন, তাহলে আমাদের জানা দরকার সেটি কোন গোষ্ঠী।’
পুতিন যাদের সাথে কথা বলেন তাদের বৃত্ত কখনই বড় ছিল না। কিন্তু যখন ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত আসে, তখন সেই বৃত্ত আরও ছোট হয়ে আসে। পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, এই বৃত্তে সেই ‘সত্য বিশ্বাসীরা’ রয়েছেন যারা পুতিনের মন ও আবেগকে বোঝেন।
পুতিনের ঘনিষ্ঠজনদের বৃত্ত কতোটা ছোট তা বোঝা গিয়েছিল ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগে জাতীয় নিরাপত্তা সভায়। ওই সময় তিনি প্রকাশ্যে রাশিয়ার ফরেন ইন্টিলিজেন্স সার্ভিসের প্রধানকে অপমান করেছিলেন। বিষয়টিকে কর্মকর্তারা নিজেদের জন্য অপমানকর বলে মনে করেছিলেন। পুতিনের বক্তৃতার কয়েক ঘন্টা পরে ইউক্রেন এবং পশ্চিমের প্রতি ক্রুদ্ধ ব্যক্তির ছবিটি বের হয়ে এসেছিল।
রুশ প্রেসিডেন্টকে যারা ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন তারা জানিয়েছেন, ১৯৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাগ হওয়ার বিষয়টিকে অপমানজনক বলে মনে করেন পুতিন। তার দৃঢ় বিশ্বাস, পশ্চিমারা রাশিয়াকে দমিয়ে রাখতে এবং তাকে ক্ষমতা থেকে তাড়াতে বদ্ধপরিকর।
সিআইএ’র পরিচালক উইলিয়াম বার্নসকে যখন পুতিনের মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, পুতিন ‘অনেক বছর ধরে ক্ষোভ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার আগুনে পুড়ছেন’ এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি ‘কঠোর’।