– দেলওয়ার এলাহী, টরন্টো
তুমি আমার থেকে আকাশ থেকে, সরাও তোমার ছায়া, তুমি বাংলা ছাড়ো’ বলে কবিতায় হুংকার ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের কবি সিকান্দার আবু জাফর। অশুভের, অসুন্দরের, অন্যায়ের, অকল্যাণের ছায়া থেকে আমাদের সবুজ প্রকৃতির দেশটিকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন এই কবি। শুধু নিজেই কল্যাণ কামনার যজ্ঞে মেতে থাকেননি। বরং শিল্পে, সাহিত্যে এমনকি পুরো সাংস্কৃতিক পরিসরেই এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গিকারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাংগঠনিকভাবে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে প্রকাশ করেছিলেন ‘সমকাল’ নামের এক অসামান্য শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা। সাতচল্লিশের দেশ ভাগের পর ঢাকায় সমকালই হয়ে উঠেছিল শিল্পী সাহিত্যিকদের প্রধান আশ্রয়স্থল ও নিজেকে প্রকাশ করার সর্বোত্তম ক্ষেত্র। সিকান্দার আবু জাফর বুঝেছিলেন রাজনৈতিকভাবে নিজেদের প্রাপ্য আদায় করার পাশাপাশি তাকে মূল্যায়ন করার জন্য মননশীলতার চর্চার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা জরুরী। পারিবারিকভাবেও এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভাই শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে তৎকালীন আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার উৎসাহ দিয়ে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন -এর শিষ্যত্বলাভ করার বিরল সৌভাগ্য হয়েছিল সৈয়দ জাহাঙ্গীরের। সৈয়দ জাহাঙ্গীর শিল্প শিক্ষার নিমিত্তে অতঃপর ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন। পশ্চিমা শিল্পের গতিপ্রকৃতির ধারণা নিয়ে বুঝলেন নিজের দেশের প্রাকৃত অনুষঙ্গ ও প্রান্তিক মানুষদের কথাই শিল্পে ধরার প্রয়াসই হবে শিল্পের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার প্রথম ও প্রধান ঋণস্বীকার। তাইতো সৈয়দ জাহাঙ্গীর এর কাজে নদীমাতৃক বাংলাদেশের, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। বিমূর্ত ধারার কাজেও এই বিষয়কে তিনি অসাধারণ স্ফূর্তিতে মূর্ত করে তুলেছেন। সহজ ও সাবলীলভাবে তাঁর বিষয়কে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেন হলুদ ও নীলের সমন্বিত রূপ লাবণ্যে। অনন্য হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে তাঁর ক্যানভাসের আশার যাত্রায় চলা চরিত্রেরা। এহেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর আন্তর্জাতিক মানের চিত্রকর হয়েও তিনি আমাদের। তিনি বাংলাদেশের অবারিত সবুজেমাখা প্রকৃতিলগ্ন শিল্পী।
এক বছর হলো তিনি শারীরিকভাবে গত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর শিল্প ও শিল্পভাবনা আমাদেরকে ঘিরে থাকবে বহুকাল। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে তাঁর স্মরণে টরন্টোয় অনুষ্ঠিত হলো এক শ্রদ্ধার্ঘ্য সভার। স্থানীয় বাংলাদেশ সেন্টারে সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফাউণ্ডেশন, কানাডা চ্যাপ্টার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন নন্দিত কবি ইকবাল হাসান। আলোচনা করেন বাংলা মেইল সম্পাদক ও এনআরবি টেলিভিশনের সিইও শহিদুল ইসলাম মিন্টু, লেখক সুব্রত কুমার দাস, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুমন রহমান, শিল্পী লায়লা শারমিন, শিল্পী তাজউদ্দীন আহমদ, শিল্পী ও লেখক সৈয়দ ইকবাল, অধ্যক্ষ এ, এফ, এম, আলীমুজ্জামান, খালেদ যুবেরী ও দেলওয়ার এলাহী। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শহিদ খোন্দকার টুকু। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা করেন শিল্পী সৈয়দ ইকবাল, শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের কন্যাদ্বয় তারিন আকবর ও শারমিন আকবর শামা। পুরো অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন শারমিম আকবর শামা।