সহসা কোন জবাব দেয় না। তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তারপর বলে, কি করেছো তাকে? তোমাদের মতো পুরুষদেরকে আমি চিনি। ভুলিয়ে ভালিয়ে রেখে দিয়েছো ফ্রি এনজয় করার জন্য! আমি পুলিশের কাছে যাবো।
এবার ভয় দেখাচ্ছে। একটু হেসে বলি, সেও পুলিশের কাছে যাওয়ারই চিন্তা করছে।
কেন?
তোমার নামে নালিশ করতে যে তুমি তাকে জোর করে প্রস্টিটিউশনে নামাতে চাইছো।
একদম চুপ হয়ে যায় এবার সে। তারপর বলে, এসব তুমিই তাকে শিখিয়েছো।
বলি, আমি তাকে সাহায্য করছি।
কি লাভ তোমার তাতে?
জীবনে চলতে সব সময় লাভক্ষতির হিসাব করলে চলে না। মেয়েটা ইন্নোসেন্ট। ওকে দেশে ফিরে যেতে দাও।
কিভাবে যাবে সে। তার পাসপোর্ট টিকেট আমার কাছে।
ফেরত দিয়ে দাও।
না। বলে ওঠে বেশ জোড়ের সাথে। ওকে এখানে আনতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সে টাকা কে দেবে? তুমি দেবে!
চকিতে সন্দেহটা আবার দোলা দিয়ে যায়। মহিলা বলে চলে, তাকে সাহায্য করতে চাইছো তো টাকাটা আমাকে দিয়ে দাও, তারপর যা খুশী করো তাকে নিয়ে গিয়ে।
বলি, তার মানে তোমার টাকার জন্য তুমি তাকে বিক্রিও করে দিতে পারো।
আমি শুধু আমার টাকাটা চাইছি।
বø্যাকমেল?
এতে বø্যাকমেলের কি হলো।
পাসপোর্ট টিকেট আটকে টাকা চাওয়াকে তাই বলে। ঠিক আছে, পুলিশের কাছে বলার এটাও একটা পয়েন্ট হলো। বলে সোজা তাকিয়ে থাকি মহিলার চোখের দিকে। সেও তাকায়। চোখমুখের ভাব দেখে মনে হলো বুঝতে পেরেছে শক্ত লোকের পাল্লায় পড়েছে। কি বলবে ঠিক করে উঠতে পারছে না। তবে একটু পরই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকানোয় বোঝা গেলো মনের জোর আর ধরে রাখতে পারছে না।
একটু ধরা গলায় বলে চলে, সে তা করতে পারে না। আমি তাকে এখানে এনেছি। নিজের টাকা খরচ করেছি-
বলি, তোমার সব টাকা দেশে গিয়ে সে দিয়ে দেবে।
মিথ্যা কথা। আবার জ্বলে ওঠে চোখ। কোত্থেকে দেবে? কি আছে ওদের? কিছু নাই বলেই সাহায্য করতে চেয়েছিলাম-। আর বিনিময়ে এখন সে আমাকে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছে!
একটা ভালো মেয়েকে প্রস্টিটিউশনে নামানো তাকে কোন সাহায্য করা নয়।
কি করবে তাহলে গরীব মেয়েগুলো। তোমাদের সাধ আহ্লাদ আছে ওদের নেই? ওদের একটু ভালো থাকতে ইচ্ছা করে না? ভালো খেতে ভালো পরতে ভালো থাকতে কার না সাধ হয়। তোমরা কি এমনিই টাকা দিয়ে দেবে ওদেরকে? দেহ বিক্রি করা ছাড়া তোমাদের কাছ থেকে আর কিভাবে আদায় করবে টাকা!
ভালো একটা বক্তৃতা দিয়ে দিলো। চুপ হয়ে শুনি। কথায় যুক্তি আছে এক ধরনের। প্রতিবাদ করিনা। বলে চলে, বুকে হাত দিয়ে বলো এই যে তুমি ওকে সাহায্য করতে চাইছো, কোনই স্বার্থ নাই এতে তোমার?
প্রশ্নটা নিজের মনকেই করি। কি স্বার্থ থাকতে পারে আমার। একটু চুপ থেকে বলি, না, তুমি যে স্বার্থের কথা বোঝাচ্ছো তেমন কোন ব্যপার নেই এখানে। একটা ভালো মেয়ে নস্ট হতে চাইছে না, আমি তাকে ভালো থাকতে সাহায্য করছি। ব্যাস। তুমি যে গরীব মেয়েদের কথা বলছো, ভালো থাকতে সবাই যে এ পথ বেছে নেয় তা ঠিক না। যদি তাই হতো সমাজ আর সমাজ থাকতো না। যে স্বেচ্ছায় নেমেছে তার কথা ভিন্ন, কিন্তু যে নামতে চাইছে না, তাকে জোর করে নামানো একটা অবশ্যই অপরাধ। এবং তুমি সেই অপরাধটা করছো, বোঝাতে পেরেছি কথাটা?
মাথা নীচু করে ভাবতে থাকে। মনে হলো কাবু করতে পেরেছি কিছুটা। আর একটু ধাক্কা দিতে হবে। বলি, এখন ভেবে দেখো তুমি ভালোয় ভালোয় ডকুমেন্টগুলো দিয়ে দেবে না ওকে পুলিশের কাছে যেতে হবে।
কোন কথা বলে না। একটুক্ষন নীরবতা। দু’জনই চুপ। এই ফাঁকে চোখ বুলিয়ে নেই রুমটার চারধারে। ছোট একটা খুপরিমতো। একপাশে একটা বিছানা। দুই জনের জন্য না। সেমি ডবল হবে। ও পাশে টি-পয়ের ওপর বসানো ছোট একটা টিভি। তাতে চলছে স্থানীয় কোন চ্যানেল। দেয়ালে পেরেক গেঁথে ছোট একটা আয়না ঝোলানো। রশি টাঙিয়ে ভেজা কাপড় মেলা। মেঝেতে দু’টো লাগেজ ব্যাগ। খোলা। জামা কাপড় ছড়ানো ছিটানো। রুমে ঢুকেই ভেজা কাপড়ের ভ্যাপসা এক ধরনের বিটকেলে গন্ধে হোঁচট খেয়েছি। নাকে রুমাল চাপা দিতে গেছিলাম। কষ্টে সামলেছি। ভেবে অবাক হচ্ছিলাম এই পরিবেশে ছিলো মেয়েটা! পাঁচ দিন। আর এ মহিলাই বা থাকছে কি করে!
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.