ঘড়ি দেখি। এগারোটার কাছাকাছি। না: আর দেরী করা ঠিক না। এ সময়ই হেলিমের ফোন আসে। ধরে বলি, একটু আটকা পরে গেছি। আসছি কিছুক্ষনের মধ্যেই। আমার কথা বলার ভঙ্গি আর চাপা কন্ঠে বোধহয় সন্দেহ হয় তার। উদ্বেগের সাথে বলে, কোন সমস্যা? ফোন রাখতে রাখতে বলি, এসে বলছি। বাই।
মহিলাটি তাকায় আমার দিকে। তারপর বলে ‘ইউ আর বেঙ্গলি?’
‘ইয়েস।’
‘বাংলাদেশ?’
‘ইউ আর রাইট।’
কাল সন্ধ্যা থেকে কথা হচ্ছে। ইংরেজী ছাড়া বলি নাই। এই প্রথম আমার মুখে অন্য ভাষা শুনে বুঝে ফেলেছে বাংলা বলেছি। শুধায়, তুমি এখানে কি করো?
ব্যবসা করি।
এখানেই থাকো?
ঘুড়িয়ে বলি, মাঝে মাঝে থাকতে হয়। এরপর একটু ব্যস্তভাব দেখিয়ে বলি, আমাকে এখন যেতে হবে। তো তুমি কি ঠিক করলে!
কন্ঠটাকে শক্ত করে বলে, আমি তাকে দেখতে চাই।
কিন্তু এখন তা হবে না।
সন্দিগ্ধ চোখে তাকায়। বলে, কেন! কোথায় এখন সে?
আমার রুমে।
বেশ অবাক হয়ে যায়। একা!
হ্যাঁ।
যদি সে তোমার সব কিছু চুরি করে পালায়!
বেশী দুর যেতে পারবে না। যেমন তুমি তার পাসপোর্ট টিকেট নিয়েও বেশী দুর যেতে পারবে না। এটা হংকং। আর তুমি তো নিশ্চয়ই এ শহরে এবারই প্রথম আসোনি।
বলে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। সেও তাকায়। গভীর দৃস্টি। কোন কথা বলে না। বুঝতে চাইছে আসলেই আমি কতদুর যেতে পারি ব্যপারটা নিয়ে।
না: এর সাথে অনেক কথা বলা হয়ে গেলো। কথা তো দু’টি। মেয়েটা এখানে থাকবে না আর পাসপোর্ট টিকেট ফেরত চাই, ব্যাস। দেবে কিনা! এর জন্য এত কথার কি দরকার। মনে মনে অধৈর্য্য হয়ে উঠতে থাকি কিছুটা।
এবার সে দৃড় হয়ে বসে। বলে, আমি তার সাথে সামনাসামনি কথা বলতে চাই।
বলবে, কিন্তু এখন না। কারন আমি এখন বাইরে যাচ্ছি। তবে চাইলে ফোনে কথা বলতে পারো। লাগিয়ে দেবো?
সামান্য ভেবে বলে, ওকে, দাও।
‘ওকে’ বলে গেস্ট হাউজের নম্বরে কল দেই। রিসিপশন থেকে রুমে লাগিয়ে দেয়। বেশ কয়েকটা রিং বাজে। একটু পর ধরে নিশা। আস্তে করে বলে ‘হ্যালো।’
বলি ‘হেই, দিস ইজ মি। শি ওয়ান্ট্স টু টক টু ইউ। গেট হার।’ বলে ফোন দেই মহিলাকে। নিয়েই উচ্চস্বরে তামিল ভাষায় কিছু বানীবচন। সম্ভবত: খিস্তিখেউড়। তারপর হডপড খডমড করে কিছু বলে চললো। ওপাশের একটু শোনে। আবার বলে চলে। প্রায় মিনিট পনেরো ধরে চললো ঝোড়ো আলাপ। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে। বসার মতো কিছু নাই। একটা টুল দেখা গেলো এক কোনায়। হয়তো ওটাকেই চেয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তখন তাতে খাবারের ঠোঙা রাখা।
একটু পর রাগ করে নিজেই লাইন কেটে দেয় মহিলা। ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে, আই উইল কিল হার, রুইন হার।
বলি, কিন্তু এখানে এই হংকংয়ে না। যাই হোক, তুমি কি ওর ডকুমেন্টগুলো ফেরত দিচ্ছো?
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.