মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রভাব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়ার ওপরও পড়ছে। গত মাসে প্রতিনিধি পরিষদে দলীয় ভিত্তিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পরবর্তী ধাপ হিসেবে ট্রাম্পের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা সিনেটে। রিপাবলিকান নেতৃত্বের হাতে এই বিচার কতটা নিরপেক্ষ হবে, সেই প্রশ্নে দ্বিধার কারণে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি অভিশংসন সিদ্ধান্ত সিনেটের হাতে এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করেননি। ফলে বিচার শুরু বিলম্বিত হয়। এই জটিলতার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা।
জাতীয় নিরাপত্তা যখন হুমকির মুখে, ঠিক তখন দেশের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য বিচার অধিকাংশ মানুষ সদয়ভাবে না-ও নিতে পারে—এই বিবেচনা থেকে বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের বিষয়টি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হচ্ছে। পেলোসি ভেবেছিলেন, প্রতিনিধি পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও লিখিত সিদ্ধান্তটি সিনেটে না পাঠিয়ে তিনি রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেলের ওপর ‘নিরপেক্ষ’ বিচারের জন্য চাপ প্রয়োগে সক্ষম হবেন। কিন্তু ম্যাককনেল পেলোসির কথা আমলে নেননি, বরং তাঁর এই চেষ্টাকে ‘ফ্যান্টাসি’ বলে উপহাস করেন। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় সিনেটের ওপর চাপ প্রয়োগে স্পিকারের হাত আরও শিথিল হলো বলে ভাবছেন ভাষ্যকারেরা। একাধিক রিপাবলিকান নেতা ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন, পেলোসি অভিশংসন প্রশ্নে রাজনীতি করছেন। ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসম্যান মার্ক মেডোস বলেছেন, ট্রাম্প যেখানে মার্কিনবিরোধী এক ইরানি জেনারেলকে নিশ্চিহ্ন করতে ব্যস্ত, তখন পেলোসি অভিশংসন প্রশ্ন নিয়ে পানি ঘোলা করতে চাইছেন।
তবে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বিনা প্রশ্নে মেনে নিতেও রাজি নন ডেমোক্র্যাটরা। জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণে প্রেসিডেন্টের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও এই আক্রমণের একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে তাঁরা ইঙ্গিত করেছেন। সে কথা ভাবার কারণ ২০১১ সালে ট্রাম্প নিজেই ওবামার বিরুদ্ধে তেমন একটি অভিযোগ তুলেছিলেন। ২০১১ সালে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ওবামা নির্ঘাত ইরান আক্রমণ করবেন। সে কথা অবশ্য সত্য প্রমাণিত হয়নি। ট্রাম্পের সেই বক্তব্য ইঙ্গিত করে, ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য আইয়ানা প্রেসলি এক টুইটে বলেছেন, ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এই হামলা তাঁকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করবে। সে কারণে দেশ এখন এক যুদ্ধের মুখোমুখি এসে পড়েছে।
রিপাবলিকান নেতৃত্বের হাতে এই বিচার কতটা নিরপেক্ষ হবে, সে প্রশ্নে দ্বিধায় স্পিকার।
সোলাইমানি যেকোনো সময় একাধিক মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক ‘টার্গেটে’ আক্রমণ হানার পরিকল্পনা করছিলেন—ড্রোন হামলার পক্ষে ট্রাম্পের এমন সাফাই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব মনে করেন, সোলাইমানির হত্যার ফলে মার্কিন স্বার্থে হামলার আশঙ্কা কমেনি, বরং বেড়েছে।
কোনো কোনো ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্যের অভিযোগ, ঠিক কোন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, সেটি তাঁরা জানেন না। গত তিন বছর মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরকে ব্যর্থ ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রমাণে ব্যস্ত থাকলেও ট্রাম্প যে এখন সেই গোয়েন্দা দপ্তরের তথ্যকেই ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণের পক্ষে ব্যবহার করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডেমোক্রেটিক সিনেটর টম উডাল। সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এ মুহূর্তে তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও কোন তথ্যের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো, তা জানতে চান।
ড্রোন হামলার আগে কংগ্রেসের অনুমতি গ্রহণ না করায় অথবা কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে সলাপরামর্শ না করায় স্পিকার পেলোসি তাঁর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর সে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার হোয়াইট হাউস সোলাইমানির ওপর হামলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কংগ্রেসের কাছে প্রেরণ করে। তবে লিখিত ঘোষণার পুরোটাই ‘অতিগোপনীয়’ থাকায় তার সমালোচনা করেছেন স্পিকার পেলোসি। তিনি বলেছেন, এর ফলে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন কমার বদলে বেড়েছে। কেন এই সময়ে হামলা হলো, কোন যুক্তিতে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা হলো, তিনি তার ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। তিনি বলেন, হামলার ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের গোপনীয়তা থেকে মনে হয়, কংগ্রেস ও মার্কিন জনগণকে এই হামলার ব্যাপারে তারা আঁধারে রাখতে চায়।