‘নো’ যেন দপ করে জ্বলে ওঠে। তাকায় আমার দিকে অগ্নিদৃস্টিতে। বলে, কক্ষনো সে পাবেনা ওগুলো আমার কাছ থেকে। আমি তাকে দেখে নেবো। বলে রাগে গজরাতে থাকে।
আমি একটু চুপ থাকি। নিশ্চয়ই মেয়েটাও পাল্টা বকাঝকা করেছে। মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন ভেবে দেখবে ওর ক্ষতি করলে পরিনতিগুলো কি কি হতে পারে। এখানে তার যারা পরিচিত আছে, তাদের সাথেও নিশ্চয়ই পরামর্শ করবে। ঠিক আছে, তা সে করতে পারে। তার জন্য কিছুটা সময়ও সে পেতে পারে। এত সহজে হার মানার লোক এ নয়।
বলি, ওকে, তোমাকে আমি চব্বিশ ঘন্টা সময় দিলাম। এর মধ্যে তোমার যা ভাবাভাবি, করনীয় ঠিক করে নেবে। আগামী কাল ঠিক এই সময় কল দেবো। যদি পাসপোর্ট টিকেট না দাও এরপর নিশার যা করার করবে, ঠিক আছে? তখন বলতে পারবে না তোমাকে ভেবে দেখার সময় দেওয়া হয়নি। চব্বিশ ঘন্টা। বলে পা বাড়াই ফেরার জন্য। দরজার কাছে এসে নবে হাত রেখে আবার বলি, ভেবো না আমি এখানে একা। অনেক বড় কম্যুনিটি আমাদের, আমার অনেক বন্ধু আছে এখানে। তারা সবাই মেয়েটার পাশে দাঁড়াবে। নব ঘুড়িয়ে দরজা খুলি। বাইরে বের হয়ে এসে ‘থ্যাংক ইউ, বাই’ বলে দরজা টেনে দেই।
বারান্দায় এসে একটা বড় করে দম নেই। ওই গন্ধে যেন এতক্ষন আটকে ছিলো। উফ্, কি করে থাকে মহিলা এ পরিবেশে! এই রকম একটা নরকে মেয়েটাকে এনে তুলেছিলো!
লিফটের দিকে এগোই। হাটতে হাটতে ভাবি, মহিলাকে যা বলার বলা হয়েছে। প্রথম দফায়ই এর বেশী বলা ঠিক হতো না। কাজ উদ্ধার করতে হবে কৌশলে। পালিয়ে গেলে সমস্যা হবে।
লিফট নিয়ে নেমে আসি নীচে। একটু হালকামতো লাগছে এখন। সকাল থেকেই টেনশন ছিলো। কিভাবে সামাল দেবো সব। কিভাবে নেবে মহিলা আমাকে। তবে মেয়েটার সাথে কথা বলার পরই যেন ভেঙে পড়েছে। বুঝতে পেরেছে হেরে যাচ্ছে। আশা করি ঝামেলায় যাবে না। এটা তো নিশ্চয়ই বোঝে পাখি যখন একবার খাঁচা ছেড়ে পালিয়েছে, আর তাকে পাওয়া যাবে না। এখন জেদের বশে উল্টোপাল্টা করলে শুধু ক্ষতিই হবে। মেয়েটা যখন হাতছাড়া হয়ে গেছে, আজ না হোক কাল সে দেশে ফিরে যাবেই। এখন তার উচিত হবে দেশে যেন তার পজিশনটা নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি চুংকিংয়ে। এ সময় আবার হেলিমের কল। ধরে বলি ‘লিফটের গোড়ায়।’
‘ওকে, আসেন’ বলে রাখে।
এই এক বিড়ম্বনা চুংকিংয়ের। প্রতিটা ব্লকের নীচে একাধিক লিফট। তারপরও সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সবগুলোর সামনে লম্বা লাইন। কোন এক্সপ্রেস লিফট নাই। সবগুলোই উঠতে নামতে প্রতি তলা ধরে। হাজার কয়েক করে লোক রোজ ওঠানামা করে এসব লিফটে। তার ওপর মাল ওঠানো নামানো, গারবেজ ব্যাগ টানা সব এতেই। লাইনে এসে দাঁড়ালে দশ থেকে পনেরো মিনিটের আগে কোনটায় ওঠা যায় না।
প্রায় ঘর্মাক্ত হয়ে এসে পৌছি হেলিমের অফিসে। অপেক্ষা করছিলো। হেসে বলে, বেশী লম্বা লাইন?
সোফায় বসতে বসতে বলি, হংকংয়ের এত কিছু বদলায় ম্যানেজমেন্টকে বলে চুংকিংয়ের লিফট সার্ভিসটার কোন উন্নতি করাতে পারেন না!
হেলিম একটু কৈফিয়তের সুরে বলে, কই তো সব সময়ই, কয় এই করুম এই করুম। এখন না করলে আর কি করা। বিল্ডিং ছাইড়্যা চইলা যাইতে পারি। তো এখন কন কি অবস্থা।
বলি, আগে পানি আনেন একটা-।
বিয়ার চলবো?
ধুর মিয়া, এই সাত সকালে আর কোন কিছুর নাম নিতে পারলেন না!
ক্যান, বিয়ারে অসুবিধা কি হইলো! ওইটাও তো পানিই। হাসতে হাসতে বলে উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল এনে দেয়। খুলে গলায় ঢেলে আগে প্রান ঠান্ডা করি। ওর চায়নীজ বউটা পাশের ঘরে। এসে দেখা করে। কুশল বিনিময় হয়। জেনির সাথে আমার কোন ঘনিষ্টতা নাই। দেখা হলে শুধু হাই হ্যালো। আমি আর হেলিম কথা বলতে শুরু করলে সে থাকেও না সেখানে। তবে আজ বসলো।
হেলিম শুধায়, কিসে আটকা পড়ছিলেন। তখন যে কইলেন আইসা কমু, কই গেছিলেন।
একটু হেসে বলি, ভ্যাজাল!
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.