এবার হেসে উঠি বেশ জোড়ে। বলি, পাগল! একটা বিদেশী মেয়ে, আজ আছে কাল নাই-!
আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, প্রেমের আবার দেশী বিদেশী আইজ কাইল থাকে নাকি!
হুঁ। চুপ হয়ে যাই। ভাবতে ভালোই লাগছিলো হেলিমের কথাগুলো। চোখের সামনে ভেসে ওঠে মায়াভরা নিষ্পাপ মুখটা। কাল সন্ধ্যায় প্রথম দেখায়ই ভালো লেগেছিলো। রাতে, ঘুমানোর আগ পর্যন্ত, সকালে- যত সময় পার হয়েছে, ওর সৌন্দর্য্যরে একটা একটা দিক ফুটে উঠেছে। মাঝে মাঝে আমি মোহিত হয়ে পরেছি। হ্যাঁ, এমন মেয়েকেই তো ভালোবাসা যায়।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে ওঠে, কি ব্যপার, কাম অইয়্যা গেছে নাকি এর মইধ্যেই!
গা ঝাড়া দিয়ে উঠি। বলি, কি বলেন সাহেব! কি কাজ হবে!
প্রেম।
সে একটা দুই দিনের অতিথি! আমি কেন তার প্রেমে পড়তে যাবো!
পুরুষ মাইনষে মাইয়াগো লগে প্রেম করে ক্যান!
কেন?
শুইবেন।
হেসে বলি, সে তো এখনও পারি। তার জন্য প্রেমে পড়তে হবে কেন! একটু যেন বোকা হয়ে যায় হেলিম। বুঝতে পারছে না কি বলবে। আমি বলে চলি, হেলিম সাহেব, প্রেমের বোধটা অন্য জিনিষ। এটা গভীর অনুভূতির ব্যপার।
সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, কিন্তু শ্যাষ গন্তব্য তো একটাই। তার জন্যে এত ধানাই পানাইয়ের কি দরকার!
সে আপনি বুঝবেন না বলে বাইরে তাকাই। একটুপর ঘড়ি দেখি, একটার ওপর। মনে পরে কোরিয়ায় কল দিতে হবে হেরিয়েলকে। কাল নেমে জানিয়েছি হংকং এসে পৌঁছার কথা। বলেছে মিটিংটা এ সপ্তাহেই হতে পারে। আজ জানাতে পারবে। এতক্ষন কল দেয় নাই। তার মানে এখনও কোন কিছু ফাইনাল হয় নাই। তবুও আমি একবার কথা বলতে পারি।
ফোন কার্ড ছিলো পকেটে। বের করি কল দেই। হেরিয়েল ধরে দুই রিংয়েই। জানায় চেয়ারম্যান আজ সকালে হঠাৎ করে টোকিও গেছে। ফিরবে দুই এক দিনের মধ্যে। ফিরলে তার সাথে কথা বলে মিটিংয়ের ডেট ঠিক হবে। হংকংয়ের কাজ শেষ হলে যেন সিওল চলে আসি। এখন ওয়েদার ভালো সেখানে। ঘুড়ে বেড়াতে পারবো। বলি, জানাবো। এরপর কিছু কুশল বিনিময় শেষে রাখি।
এরপর হেলিম আমাদের ব্যবসার আলোচনায় আসে। আগের কিছু কাজের আলাপ ছিলো। সেগুলো সেড়ে নতুন প্রস্তাবটা আবার তোলে। একেবারে বিনা চালানে অনেকগুলো টাকার লোভ দেখায় আবার। এ ব্যাপারে আমার নতুন কিছু বলার নাই। ফলে খুব একটা আগ্রহ দেখাই না এ আলোচনায়। তারপরও হেলিম বলে চলে এটা ওটা। আমি এক কান দিয়ে শুনি আর এক কান দিয়ে বের করে দেই।
সিটি থেকে এয়ারপোর্ট কম দুর না। আগেরটা ছিলো কাছে। ট্যাক্সিতে আধা ঘন্টার পথ। কিন্তু ছোট হওয়ায় সে এয়ারপোর্টে প্লেন ওঠা-নামার স্থান সংকুলান হতো না। রানওয়ে ছিলো ছোট, বড় এয়ারক্রাফট নামতে পারতো না। হংকংয়ের সব চাইতে বড় সংকট জায়গা। সব আছে এদের, সবই পেতে পারে যা চায়, শুধু জায়গা ছাড়া। এখন সাগর থেকে জায়গা উদ্ধার করছে। বাঁধ দিয়ে পাথর বালু ফেলে ভরাট করে নতুন ল্যান্ড তৈরী করছে। প্রায় দশ বছর ধরে এমনই একটা ল্যান্ড বানিয়ে তার ওপর গড়া হয়েছে এই নতুন এয়ারপোর্ট। বিশাল কমপ্লেক্স। সাগর থেকে এসেছে একাধিক প্রশস্ত রানওয়ে। যে কোন ধরনের এয়ারক্রাফট এখন ওঠানামা করতে পারে। মূল টার্মিনাল ভবন একটা দেখার মতো জায়গা।
এয়ারপোর্ট টু সিটি শাট্ল ট্রেন সার্ভিস আছে। ভাড়া একটু বেশী। অনেক জায়গায় দাঁড়ায়। একটু বিরক্তিকরই। বাসটাই ভালো। ভাড়া কম, সময় লাগে কম। সঙ্গে কেউ থাকলে কথা বলতে বলতেই চলে আসা যায়। আমরাও এসে পৌছি এয়ারপোর্ট। টেরই পাইনা কখন পার হয়ে গেছে সময়। আসলে জার্নিতে বই পড়তে পারলে বা কথা বলতে পারলে কোন দিক দিয়ে সময় চলে যায় টের পাওয়া যায় না।
বাস থেকে নেমেই হেলিম ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইমিগ্রেশনে ফোন করে। ওরা একটু অপেক্ষা করতে বলে। আমরা হাঁটাহাঁটি করতে থাকি নীচতলায় ইমিগ্রেশন এগজিট লবির মুখে। মিনিট দশেক পরে একজন এসে হেলিমকে ভেতরে নিয়ে যায়। হেলিম চায় আমাকেও সাথে নিতে। ইমিগ্রেশনের লোকটা বলে প্যাসেঞ্জার তোমার নাম বলেছে তোমাকেই আমাদের দরকার।
অমি আগ বাড়িয়ে বলি, যদি আমার সাহায্য দরকার হয়, ডেকো। আমি এখানেই আছি।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.