বলে আর কোন কাজ নাই, একে নিয়ে যাওয়াটাই কাজ ছিলো, হয়ে গেছে। এখন যাওয়া যায়। বলি, তাহলে কিছু খেয়ে নেন। আপনাদের দেরী দেখে আমি ম্যাকডোনাল্ড খেয়ে নিয়েছি।
হেলিম বলে, চলেন। লোকটাকে বলে, ওই মিয়া, খাইতে পারবা তো স্যান্ডউইচ বার্গার?
লোকটা মাথা নেড়ে বোঝায় পারবে। তারপর শুধায়, মিয়াবাই, হেইগুল্যা কি দিয়া বানায়!
হেলিম আমার দিকে ফিরে বলে, নেন, বোঝেন বাঙ্গু কারে কয়!
খাওয়া দাওয়া সেড়ে আর দেরী করি না। বাস ধরে এসে মিরাডরের সামনে নামতে নামতে প্রায় পাঁচটা বেজে যায়। হেলিমকে বলি, একটু রুমে যাই। দেখি মেয়েটা কি করছে। সকাল থেকে একা।
হেলিম একটু মুচকি হেসে বলে, যান যান, দ্যাখেন সব ঠিকঠাক মতো আছে কিনা। আমি অরে রুমে রাইখ্যা আইতাছি।
লোকটা হেলিমের ডরমিটরিতেই থাকবে। ট্রানজিট, বোঝাই গেলো। তবে গন্তব্য কোথায় জানি না। জিজ্ঞাসও করি নাই।
কথা হলো হেলিম এলে আবার বেরুবো। সে চলে যায় চুংকিংয়ে। আমি ফিরে আসি আমার গেস্ট হাউজে। দরজার সামনে গিয়ে চাবি বের করি। খুলতে গিয়ে থামি। না এভাবে হুট করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলে ভয় পেয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে বেল দেই। ও-ই খুলে দিক। বেল বাজাই। বেশ কয়েকবার। কোন সাড়া নাই।
গলাটা একটু উঁচু করে বলি ‘ইট্স মি। ইউ ক্যান ওপেন দ্য ডোর।’
সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেয় দরজা। ‘হাই’ বলে ভেতরে আসি। একটু হেসে এক পাশে সড়ে দাঁড়ায়। বোঝা গেলো দরজার পাশে এসেই দাঁড়িয়েছিলো। দ্বিধা করছিলো খুলবে কিনা। বন্ধ করে দিয়ে বলি ‘সরি, আই এ্যম লেট।’
কিছু বলে না। গিয়ে ওর বেডের পাশে দাঁড়ায় একটু আড়স্ট হয়ে। আমি সোফায় বসে জুতো মোজা খুলতে খুলতে শুধাই, কি করছিলে।
বলে, বসে ছিলাম।
নিশ্চয়ই বোর হয়ে গেছো।
সে কথার জবাব না দিয়ে শুধায় আমার খাওয়া হয়েছে কিনা।
বলি, হ্যাঁ, এয়ার পোর্টে ম্যাকডোনাল্ড খেয়ে নিয়েছি। তোমার খবর কি! দুপুরের খাবার হয়েছে?
মাথা নীচু করে ঝাকায়। বোঝায় খেয়েছে।
নীচের রেস্টুরেন্টে অর্ডার দিয়েছিলে?
কোন জবাব দেয় না। সন্দেহ হয়। এবার তাকাই রুমের চারপাশ। না, এমন কোন আলামত নাই। ট্র্যাশ বীনে কোন র্যাপার পেপার প্লেট গøাস নাই। সকালে নাস্তার পর যেমন রেখে গেছিলাম তেমনই। তবে রুমটা পরিপাটি করে গোছানো। আমার জামা প্যান্ট হ্যাংগারে ঝোলানো। লুঙ্গি ভাঁজ করে রাখা। তোয়ালেটা মেলা। শুধাই বিষ্ময় কন্ঠে, খাওনি কিছু?
তাকায় মুখের দিকে। চোখে এক ধরনের কাচুমাচুভাব। আমতা আমতা করে বলে, খেয়েছি তো।
কি খেয়েছো!
এখানে তো অনেক কিছু আছে।
এখানে! কি আছে এখানে। কিছু বিস্কিট কেক আর ফল!
ও যোগ করে, ফ্রিজে কোকও আছে।
একটু চমকেমতো উঠি। তার মানে ফ্রিজ খুলেছে। সেখানে বিয়ার রাখা আছে। চকিতে চোখ যায় টেবিলে যেখানে জ্যাক লর্ডের বোতলটা রেখেছিলাম কাল রাতে। এখন নাই। এটাও দেখেছে। কি করেছে সেটা! ফেলে দিয়েছে! সে যাই হোক। ভাবি, সারাদিন শুধু কেক বিষ্কিটের ওপর আছে! ব্যপারটা কেমন হলো! আমি রুমে থাকলে নিশ্চয়ই এভাবে না খেয়ে থাকতো না। বেচারি বিপদে পরে আশ্রয় নিয়েছে। দু’দিন পর চলে গেলে হয়তো হারিয়ে যাবে চির দিনের জন্য। কিন্তু এই স্মৃতি তো রয়ে যাবে। কখনো মনে পড়লে দেখবে লোকটা তাকে না খাইয়ে রেখেছিলো!
বলি ‘দিস ইজ নট ফেয়ার।’
একটু ঘাবড়ে যায় যেন। সভয়ে বলে ‘হোয়াট!’
‘ইউ স্যুড হ্যাভ টেকেন লাঞ্চ।’
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.