এ্যাঁ। ধাতস্থ হই। বলি, না না, কোথায় ফেলে রেখে যাবো! তার আগেই তোমার সমস্যার সমাধান বের করে প্লেনে উঠিয়ে দেবো।
এবার উঠে আসে বিছানা থেকে। সামনে দাঁড়িয়ে হাত দু’টো জোড় করে কাতরকন্ঠে বলে, আমি জানি তুমি আমাকে ফেলে দেবেনা। আমার ভগবান আমাকে কখনো ত্যাগ করবে না।
সহজ করতে বলি, এতো ভাবছো কেন? আমি তো যাই নাই, আছি।
একইভাবে বলে চলে, প্লিজ আমাকে ত্যাগ কোর না। তুমি ছাড়া এখানে আমার কেউ নাই!
এই শেষের কথাটা যেন এলোমেলো করে দেয় আমাকে। এমনভাবে বললো যেন সে আমাতেই সমর্পিত হয়ে আছে। যেন আমারই কেউ। তাকাই এ সময় গভীর দৃস্টিতে। ও-ও তাকিয়ে থাকে। মনে হলো, না, কোন খাদ নেই সে চোখে। বড় শুদ্ধ পবিত্র, একরাশ নিখাদ আস্থা। উপেক্ষা করা যায় না সত্যের সে শক্তি।
চোখ ফিরিয়ে নেই। ভাবতে হয় সিরিয়াসলি ব্যপারটা নিয়ে। তাইতো, আমি ওকে এখানে এভাবে রেখে যাই কিভাবে বা আমি চলে গেলে ওর কি হবে! আজ সোমবার। যদি কাল মহিলা ভালোয় ভালোয় দিয়ে দেয় পাসপোর্ট টিকেট, কালকের ফ্লাইট ধরতে পারছে না। শুক্রবারের ফ্লাইটে উঠিয়ে দিলে আমি মুক্ত। মাঝখানে তিনটা দিন। ধারনা করছি এর মধ্যে সিওলের প্রগামটা হচ্ছে না। আর যদি থানা পুলিশ পর্যন্ত যেতে হয়, ওকে হংকং থাকতে হবে বেশ কিছুদিন।
সমস্যাটা এখানেই। যদি রি-ইস্যুতে যেতে হয় ততদিন ও থাকবে কি করে হংকং। ভিসা এক্সপায়ার হয়ে যাবে এর মধ্যে। আর আমিই বা কতদিন থাকতে পারবো। কোরিয়া থেকে ফিরে পরদিনই আমার ঢাকা ব্যাক করার কথা। ঘুড়ে ফিরে কথাটা এক জায়গায়ই আসছে, যেভাবে হোক মহিলার কাছ থেকেই উদ্ধার করতে হবে ডকুমেন্টগুলো।
ওর দিকে ফিরে একটু হেসে বলি, ভেবো না। তোমার ভগবানই তোমাকে রক্ষা করবে।
হাত জোড় করে আমার উদ্দেশ্যে কপালে ঠেকায়। চোখদু’টো বোজা। অদ্ভূত সুন্দর লাগে মুখটা সে সময়। একটুক্ষন পর চোখ খুলে বলে, আমার ভগবান আমার সামনে। আমি জানি সে আমাকে কখনো ত্যাগ করবে না।
একটু হেসে শুধাই, কখনো না?
বলার ভঙ্গিতে ঈঙ্গিতটা বুঝতে পারে। একটু লজ্জা পেয়ে যায় যেন। কোন কথা না বলে সড়ে গিয়ে বসে ও পাশের বিছানাটায়। আমি প্রসঙ্গ পাল্টে বলি, শোন, দুপুরে তো উপবাস করেছো। এখন আমার বন্ধু কিছু হালকা নাশতা আনছে। আপাতত এগুলো চলুক। রাতের খাবার একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট থেকে নিয়ে আসবো। চলবে? নাকি চাও বাইরে গিয়ে খেয়ে আসতে!
একটু ভয় পেয়ে যায়। বলে, না না, আন্টি আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। আমি এ রুম থেকে বের হবো না।
বলি, কাম অন, এটা হংকং, চেন্নাই না। এনিওয়ে, তাহলে তুমি রুমেই থেকো। আমার বন্ধু এলে একটু বেরুবো তার সাথে, ওকে?
ঘাড় নাড়ে। মনে হলো ধীরে ধীরে মনমরা ভাবটা কেটে যাচ্ছে। চোখেমুখে এক ধরনের স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। যেন এখন মোটামুটি আস্বস্ত আমি তাকে প্লেনে না উঠিয়ে দিয়ে ত্যাগ করছি না। ঠোটের কোনে ফিরে আসে এক টুকরো হাসি। বড় অদ্ভূত সুন্দর লাগে ওকে এ সময়। চোরা চোখে তাকাচ্ছিলাম। তবে চোখ ফিরিয়ে আনতে পারছিলাম না যেন।
দরজায় বেল বেজে ওঠে। নিশ্চয় হেলিম। বলি ‘হি হ্যাজ কাম।’
শুধায় ‘ইওর ফ্রেন্ড?’
‘ইয়েস।’ বলে উঠে গিয়ে দরজার নবে হাত রাখি। ও এই ফাঁকে শাড়ির আচল টাচল ঠিক করে নেয়। আমি সেদিকে একটু দেখে নবটা ঘুড়িয়ে দরজা মেলে ধরি। হেলিম এসে ঢোকে রুমে। হাতে খাবারের প্যাকেট। মনে হলো বেশ হেভী নাশতাই এনেছে। সঙ্গে চা।
রুমে ঢুকেই হেলিমের চোখ যায় নিশার ওপর। এরপর এক রকম হা করেই তাকিয়ে থাকে যেন খানিকক্ষন। পরিচয় করিয়ে দেই। নিশা জোড়বদ্ধ হাত তুলে একটা তামিল শব্দ উচ্চারন করে। হেলিম বলে, হাই!
বসতে বললে যেন সম্বিৎ ফেরে হেলিমের। তারপরও চোখ ফেরায় না। বলে ‘হাও আর ইউ?’
মিষ্টি হেসে বলে নিশা ‘ফাইন। ইউ?’
‘গুড গুড।’ এবার আমার দিকে ফিরে বাংলায় বলে, কুন ভাষায় কথা কন আপনেরা, ইংরাজীই?
বলি, হ্যাঁ, ওর মাতৃভাষা তো তামিল। আমি জানি না। আমারটা ও জানে না।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.