ও পানির বোতল এনে বসে। মুখোমুখি দু’জন। দু’জনই মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছি। টিভি চলছে। একটা ইংরেজী চ্যানেল। শুধু টিভির আওয়াজ। আমাদের মুখে কোন কথা নাই। আসলে কি বলবো বুঝেই উঠতে পারছি না। মনে হচ্ছে এর সাথে আমার এমন কোন বিষয়ই নাই যা নিয়ে কথা চলতে পারে। একবার তাকাই মুখের দিকে। ও মাথা নীচু করে ছিলো। চোখ তুলে তাকায়। চোখাচোখি হতে দু’জনই হেসে দেই।
খাওয়া পর্বে শুধু রান্না কেমন, টেক সাম মোর, কি বেশী পছন্দ করো মাছ না মাংশ জাতীয় টুকটাক কথা হয়। শেষ হলে প্লেট গ্লাস ওঠাতে যাই। ও টেনে ধরে বলে ‘লিভ ইট।’
তাকাই মুখের দিকে। মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বোঝায় এগুলো ও পরিষ্কার করবে। বলে, বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে তোমার জায়গায় গিয়ে বসো। এগুলো মেয়েদের কাজ। আমাকে করতে দাও।
আমি কোন কথা না বলে উঠে দাঁড়াই। বেশ ভালো লাগলো এই আন্তরিকতাটুকু। আরো ভালো লাগছিলো বেশ সহজ হয়ে এসেছে। হাত মুখ ধুয়ে এসে বসি বিছানায়। সব পরিষ্কার করতে থাকে নিশা। আমার চোখ টিভিতে। কিন্তু আড়চোখে লক্ষ্য করছিলাম বেশ নিষ্ঠার সাথে নিপুন হাতে সব গুছিয়ে রাখলো।
এক ধরনের ভালোলাগাবোধে ভরে যায় মনটা। একটা সিগারেট ধরিয়ে পা লম্বা করে ছড়িয়ে হেলান দিয়ে বসি বিছানায়। কাজ শেষ করে টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে এসে বসে ওর বিছানায়। হেসে বলে ‘আই ডোন্ট লিভ মাই জব ফর নেক্সট ডে।’
হালকা রহস্য করে বলি ‘হাও কুড ইউ থিংক দিস ওয়াজ ইওর জব ইন হিয়ার?’
বলে ‘দিস ইজ উইমেনস জব এ্যান্ড আই এ্যম এ ওম্যান।’
‘বাট ইউ আর মাই গেস্ট।’
‘নো, আই এ্যাম নট।’ বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো। একটু অবাকই হই। বলি ‘নো গেষ্ট! দেন হু -!’
কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপ হয়ে যায়। মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে তাকায় টিভির দিকে। পার হয় কয়েক মূহুর্ত। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকি। চোখাচোখি হতে ও-ও একটু হাসে। কিছু বলে না। আবার রিপিট করি, বললে না তুমি আমার কি হও এখানে!
সামান্যক্ষন চুপ থেকে বলে, জানি না। তবে আমি তোমার মেহমান নই।
তাকিয়ে থাকি এক দৃষ্টে। মেহমান না! তাহলে ওর স্ট্যাটাসটা এখানে কি মনে করছে!
এবার আস্তে করে বলে ওঠে, আমাকে যদি মেহমান মনে করো আমি সহজ হতে পারবো না।
মুখ ফষ্কে বের হয়ে যায়, তাহলে কি মনে করবো!
তোমার একজন মনে করতে পারো। বলে চোখ ফেরায় টিভির দিকে। মুখে কোন কথা সড়ে না আমার। ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করি। কি বললো কথাটা! আমার একজন মনে করবো! আমার একজন, কে!
না:, মাথাটা আবার ঘুলিয়ে গেলো। যে ভাবনাগুলো এড়াতে হেলিমের ওখানে বসে অতগুলো বিয়ার খেলাম সেই ঘোরের মধ্যেই পড়ে রইলাম। এসবই যদি মাথায় খেলা করতে থাকে ঘুমাবো কি করে! চেয়েছিলাম ওর প্রতি কনসেন্ট্রেশনটা কমিয়ে ঘুমানোর দিকে ধ্যান দিতে। এখন যা বলছে তাতে তো ঘুম আরো পালালো! আমার একজন ! কে আমার!
প্রসঙ্গটা পাল্টাতে হবে। একটু চুপ থেকে বলি, ওকে, তুমি আমারই একজন। তবে এখন কিন্তু রাত বেশ। তুমি কি মনে করো না আমাদের এখন ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
সে কথার জবাব না দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি কি আমার কথায় বিব্রত হয়েছো! আই এ্যাম সরি দেন।
কোন কথাটা বলো তো!
এই যে বললাম আমাকে তোমার একজন মনে করতে পারো।
একটু ইতস্তত: করে বলি, না বিব্রত না, তবে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ও কথাটা বলে তুমি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছো!
এবার আমার দিকে ভালোভাবে ফিরে বলে, দেখো, আমরা এখন দু’জন এক সঙ্গে আছি। যে ক’দিনের জন্যই হোক, এটাই বাস্তব আমরা এক রুমে বসবাস করছি। যদি এ কালটুকুর জন্য পরষ্পরকে আপন মনে না করতে পারি, এই বসবাসটা কি এ্যমবারাসিং বোরিং হয়ে যাবে না!
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.