একটু ভেবে বলে, জানিনা। তবে এভাবে সে চলে যাবে মনে হয়না। আমার সাথে একটা বোঝাপড়া না করে যাবে না। পালালে তো টাকাটা আর পাচ্ছেনা, তাই না?
সেটা অবশ্য ঠিক। আমারও ধারনা টাকার ব্যপারে একটা কিছু ফাইনাল না করে ভেগে যাবে না। তবে দেখা যাক। আর কিছুক্ষন পর কল দেই, কি বলো!
তোমার দেয়া চব্বিশ ঘন্টা কি পার হয়ে গেছে?
প্রায়। আগ বাড়িয়ে ফোন দেবে বলে কি তোমার মনে হয়?
দিতেও পারে। আর একটু অপেক্ষা করতে পারো।
টুকটাক কথাবার্তা বলতে বলতে আমাদের খাওয়া শেষ হয়। চায়ের কাপ নিয়ে এসে বসি আমার বিছানায়। নিশা টেবিল পরিষ্কার করতে থাকে। হঠাৎ খেয়াল হয় ব্যপারটা কেমন একটা বাধাধরা নিয়ম হয়ে গেলো যেন। যেন পয় পরিষ্কার গোছগাছ করা কাজটা ওরই। আমি শুধু হাতমুখ ধুয়ে খাবো আর খেয়ে এসে বিছানায় বসবো। হাসি পায়। আমিও কেমন কিছু বলছি না। মেয়েটা যে দু’দিনের মেহমান এখানে, ওকে কোন কাজ করতে দেয়া উচিত না আমার, এ বোধটাও হচ্ছে না। যেন আমারই কেউ। চকিতে প্রশ্নটা টোকা দিয়ে যায়, কে আমার!
সব কাজ শেষ করে চা নিয়ে এসে বসে ওর বেডে। মুখে ষ্মিত হাসি। আমি সেদিকে তাকিয়ে বলি, মনে হচ্ছে না যে তুমি মাত্র একদিন আগে এসেছো এ রুমে।
ঠোটের কোনায় ষ্মিতহাসি ফুটিয়ে ঘাড়টা একটু বাকা করে শুধায়, কি মনে হয়।
মনে হয় যেন কবে থেকেই আছো এখানে।
হেসে বলে, জীবনে চলতে গেলে সব সময় পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হয়, তাই না। নইলে নানা ভাবনা কাজ করে। এবং এসব ভাবনা মনকে ছোট করে ফেলে। বসবাসটা তেতো হয়ে ওঠে। আসলে আমি গরীব ঘরের মেয়ে তো। আমাদেরকে এভাবেই জীবনের বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। সবকিছুর সাথে মানিয়ে চলতে হয়। নইলে গরীবরা বেঁচে থাকতে পারতো না।
মুগ্ধ হয়ে যাই ওর ব্যখ্যায়। তাকিয়ে থাকি প্রশংসার দৃষ্টিতে। বলে চলে, আমি তো এখানে যে কোন পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত।
বুঝতে পারি না কি বোঝালো। শুধাই, যে কোন পরিস্থিতি মানে!
যে কোন পরিস্থিতি। ধরো যদি তুমি আমার ওপর অসন্তুষ্ট থাকতে, আমাকে একটা বিড়ম্বনা মনে করতে বা আমাকে একটা ভোগ্যবস্তু বানাতে চাইতে-।
অবাক হয়ে যাই। কি বলছো তুমি!
হেসে বলে, কিন্তু আমার সৌভাগ্য তুমি আমাকে সম্মান করেছো। আমার কি নিজেকে তোমার এই রুমটার একজন মনে করা উচিত নয়?
অদ্ভূত সুন্দর করে বলে গেলো কথাগুলো। ইংরেজী অতটা সাবলীল নয়, ব্যকারনের ভুলও আছে, তারপরও ভাব বোঝাতে কোন সমস্যা হলো না। আমি আসলেই মুগ্ধ বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইলাম কয়েক মূহুর্ত ওর মুখের দিকে।
এবার বলি, তোমার কি কোন কিছু নিয়েই টেনশন হচ্ছে না?
বলে, টেনশন তো তুমি নিজের মাথায় তুলে নিয়েছো। আমিও যদি তাতে যোগ দেই তাতে তোমার আর একটা টেনশন বাড়বে! তার চেয়ে এটাই কি ভালো না, আমি সময়গুলোকে উপভোগ করি। বলেই হেসে ওঠে। হাসতে হাসতেই বলে, অবশ্য ব্যপারটা নিছকই স্বার্থপরতা হয়ে গেলো। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।
না, মেয়েটাকে যত হালকা মনে করেছিলাম তা নয়। ভাবনায় গভীরতা আছে। অবাকই হচ্ছিলাম, জীবন সম্পর্কে যার উপলব্ধি এত গভীর সে কি করে একটা বাজে মহিলার ফাঁদে পড়ে এখানে এসে আটকে গেছে!
ঘড়ির দিকে তাকাই। সাড়ে দশটার মতো। চা খেতে খেতে কোন দিক দিয়ে সময় পার হয়ে গেলো। আসলে মেয়েটা আমাকে যেন এতক্ষন আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। এবার উঠে দাড়াই। বলি, শোন মহিলাকে কল না দিয়ে সোজাসুজি তার রুমেই চলে যাই। সেখানে গিয়ে না পেলে তারপর ফোন দেবো, কি বলো।
তা করতে পারো।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.