ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আতিকুল ইসলাম।
এর মধ্যে ফজলে নূর সংসদ সদস্যের পদ ছেড়ে মেয়র নির্বাচনে অংশ নেন। আর আতিকুল ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে ৯ মাস মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি।
গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে দুই সিটিতে ভোট গ্রহণ করা হয়।
বাসস জানায়, ভোট গ্রহণ শেষে রাত সাড়ে নয়টার দিকে শেখ ফজলে নূর ও আতিকুল ইসলাম গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী দুজনকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিজয় দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন।
এবার দুই সিটির সব কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট গ্রহণ হয়েছে। গত রাত পৌনে একটায় ঢাকা দক্ষিণের ১ হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে সব কটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়। তাতে শেখ ফজলে নূর পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট। তাপস ক্ষমতাসীন দলেরই বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র পদে মোট ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আবদুর রহমান পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫২৫ ভোট। গণফ্রন্টের প্রার্থী আবদুস সামাদ পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৩ ভোট। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী বাহারানে সুলতান পেয়েছেন ৩ হাজার ১৫৫ ভোট। বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতারুজ্জামান পেয়েছেন ২ হাজার ৪২১ ভোট।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে গত রাত সোয়া ১টা পর্যন্ত ১২০৫টির ফল ঘোষণা করা হয়। তাতে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ ভোট। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৮৪১ ভোট। বাকি ১১৩টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা বাকি আছে। তবে এসব কেন্দ্রের শতভাগ ভোট তাবিথ পেলেও তাঁর জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র’ থেকে। গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে ঢাকা গড়ব। তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক চাচা–ভাতিজার। আমি মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাবিথকে ডাকব। তাঁর ইশতেহারে ভালো কিছু থাকলে আমরা সেটি নেব। যানজট, জলজট ও এডিস মশা নির্মূলে কাজ করব।’ ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটে দুই নম্বরি করার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
গতকাল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ভোট পড়ার হার ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। আরেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ভোট পড়ার হার ২৫ শতাংশের নিচে হবে। এবার ঢাকা দক্ষিণে মোট ভোটার ছিলেন ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ এবং উত্তরে মোট ভোটার ছিলেন ৩০ লাখ ১ হাজার ২৭৩ জন।
রাতে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন জানান, ভোট পড়ার হার ২৯ শতাংশ। ফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ট্যাবে রেজাল্ট পাঠাতে ভুল করেছেন, অনেকে ম্যানুয়ালি পাঠিয়েছেন। যাঁরা ভুল করেছেন, তাঁদের আলাদা আলাদাভাবে ফোন করে ম্যানুয়ালি রেজাল্ট নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর ঢাকা উত্তরে ভোট পড়েছিল ৩৭ দশমিক ২৯ শতাংশ।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। এর প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে দলটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা কঠোরভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ভোট শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি-সমর্থক প্রার্থীরা।