দেশে সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স আয় ৩৭৪ কোটি ৬ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমেছে।
রোববার (৩ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস গত জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৪ কোটি মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ কোটি ডলার কম। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৪ কোটি ডলার।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে ফেব্রুয়ারি মাসে। যার পরিমাণ ছিল ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই মাসে রেমিট্যান্স কম আসলেও তা সদ্য সমাপ্ত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় বেশি। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল ১৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার।
ব্যাংকারদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, সারা বছরের মধ্যে দুই ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বাড়ে। ঈদে দেশে নগদ টাকার চাহিদা থাকার তার যোগান দিতেই প্রবাসীরা তাদের আত্মীয় স্বজনের নিকট রেমিট্যান্স পাঠায়। প্রবাসীদের এই অর্থে দেশে থাকা আত্মীয় স্বজনরা ঈদে কোরবানি ও প্রয়োজনীয় কেনাকাটার চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু এবার যে কম পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা ব্যতিক্রম দেখা গেছে। তাদের মতে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে অনেকে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম এসেছে বলে মনে করছেন তারা।
তারা আরো বলছেন, গত অর্থবছরের পুরো করোনা মহামারি ছিল। তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ছিল। ফলে যাতায়াত বন্ধ থাকায় ওই সময় রেমিট্যান্স অবৈধ পথে পাঠাতে পারতো না প্রবাসীরা। এসব রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে। যার কারণে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে। এখন আগের মতো লকডাউন নেই, তাই অবৈধ পথ খোলা রয়েছে, তাতে রেমিট্যান্স কমে গেছে।
প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে নানা উৎসাহ দিতে নীতি সহায়তায় দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে ২.৫০ শতাংশ প্রণোদনা তো রয়েছেই। অর্থাৎ কেউ ১০০ টাকা পাঠালে প্রণোদনা পায় ২.৫০ টাকা। তাছাড়া সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, পাঁচ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলেও কোনও ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আগে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি রেমিট্যান্সের বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। এসব সুবিধার অব্যাহত থাকলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটা কমেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের রেমিট্যান্সের মধ্যে জুলাইয়ে এসেছে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি ১ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ এবং ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ, জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ, মার্চে ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ এবং সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৪ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে আসা রেমিট্যান্সের মধ্যে জুলাইয়ে এসেছে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার, আগস্টে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ, অক্টোবরে ২১০ কোটি ২১ লাখ, নভেম্বর ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ এবং ডিসেম্বরে ২০৫ কোটি ৬ লাখ, জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ৫ লাখ, মার্চে ১৯১ কোটি ৯ লাখ, এপ্রিলে ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ, মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ এবং জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৪ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার।