রউফ সাহেব এরপর নিশার এলাকার বিষয়, চেন্নাই সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বলেন তার এক আত্মীয়ার চিকিৎসার প্রয়োজনে একবার চেন্নাই গিয়েছিলেন। সে সুবাদে কিছুদিন তাকে থাকতে হয়েছিলো সেখানে। চেন্নাই শহরটা তার ভালো লেগেছে। জানতে চান শহরের কোন দিকটায় তাদের বাড়ী। নিশা বলে তাদের এলাকাটা মূল চেন্নাই শহরের মধ্যে নয়। মাইল চল্লিশেক দুরে পাত্তাবিরাম নামে একটা উপ শহরে। শাট্ল ট্রেন সার্ভিস আছে। ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে চেন্নাই আসা যায়। রউফ সাহেব বলেন তার অবশ্য শহরের বাইরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে চেন্নাই শহর এবং সে শহরের মানুষজনকে তার ভালো লেগেছে। নিশা মিস্টি হেসে তাকে ধন্যবাদ জানায়। এরপর রউফ সাহেব জানতে চান হংকং তার কেমন লাগছে।
নিশা একটু আমতা আমতা করে বলে, আমি এখনো দেখিনি কিছুই। আসলে সে বুঝতে পারছিলো না আমি কতটুকু বলেছি এদের কাছে ওর সম্পর্কে। আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলো। এ দৃষ্টির অর্থ ভুল কিছু বলে ফেললে ক্ষমা করে দিও।
আমি বলি, দেখবে কি করে! এসেছে থেকে বন্দী মহিলার ওখানে। তারপর এ ক’দিন তো টেনশন পাসপোর্ট টিকেট উদ্ধার নিয়ে।
রউফ সাহেব বলেন এখন তো টেনশন গেছে। এখন দেখতে পারে। হঠাৎ শুধান, তুমি ফিরছো কবে।
আচমকা এ প্রশ্নে একটু হতচকিত হয়ে যায় নিশা। অসহায়ের মতো তাকায় আমার দিকে। আমিও বুঝতে পারিনা কি বলা উচিত তার। কারন ওর ফেরা নিয়ে এখনো কোন আলোচনাই করিনি আমরা। ভাব দেখে মনে হলো বুঝতে পারছে না কি বলবে। আমিই বলি, এখনো ঠিক করিনি। মাত্র কিছুক্ষন আগে জিনিষগুলো পেয়েছে। তবে পরের ফ্লাইট হচ্ছে শুক্রবার। সম্ভবত ওই ফ্লাইটেই।
রউফ সাহেব শুধান, তোমার ইচ্ছাটা কি।
নিশা একটু ইতস্তত: করে বলে, আমি জানি না।
মনে হলো এ প্রসঙ্গে সে বেশী কথা বলতে চাইছে না।
আমি তার সাহায্যে বলি, আসলে এখনো মাথা ঠান্ডা করে বসেই নি। তবে যেদিনই যাক কাল পরশু তো থাকছেই। যদি চায় এ দু’দিন একটু ঘুড়ে দেখতে পারে।
হেলিম এবার যোগ করে, ইচ্ছা হলেও ও কি আর মুখে বলবে! আপনিই নিয়ে যান।
আমি তাকাই নিশার দিকে। সে একটু হেসে মাথা নীচু করে।
ইতিমধ্যে হেলিম আর রউফ সাহেব বেশ সহজ হয়ে ওঠেন। নানা বিষয়েই কথা তুলছিলেন। তবে নিশা খুব একটা উৎফুল্লতা দেখায় না সে আলোচনায়। হয়তো মনে করে আমি না কিছু মনে করি তাতে। বেশ সংযত। বোঝা গেলো মেয়েটা বুদ্ধিমতি। ওদের কথার জবাব দিচ্ছিলো তবে নিজের থেকে কথা যা আমার সাথেই বলছিলো, কখনো একটু নীচু স্বরে কখনো স্বাভাবিক কন্ঠে।
খাবার এসে যায়। প্রথমে স্যুপ পরে ডিশ। মোটামুটি ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে আমরা খাওয়া শেষ করি। ভালোই। আমাদের দেশের বাংলা থাইয়ের মতো ভাতের মাড় না। অরিজিনাল থাইয়ের ফ্লেভারই পাওয়া গেলো। খাওয়ার পর হেলিম একটু উসখুশ করছিলো। তার ইচ্ছা কিছু ড্রিংকস নেওয়া। সেলিব্রেশন পার্টি ড্রিংকস ছাড়া জমে না। রেস্টুরেন্টে ব্যবস্থা আছে। কিন্তু নিশার সামনে খাওয়াটা ঠিক হবে কিনা।
আমাকে এবার বাংলা বলতে হয়। বলি সেটা ঠিক হবে না। অন্য কিছু মনে করে বসতে পারে। রউফ সাহেবও সায় দেন। বলেন দরকার হলে নিশাকে রুমে রেখে এসে হেলিমের ওখানে বসা যায়।
নিশা তাকায় আমার দিকে। সে দৃস্টির অর্থ জানতে চাইছে আমরা কি বলাবলি করছি। একটু ঘুড়িয়ে বলি, ওরা জানতে চাইছে আরো কিছু নেবো কিনা।
স্মার্ট মেয়ে। বলে, আরো কি? ড্রিংকস?
ওরা দুইজনই তাকায় আমার দিকে। আমি সামলে নেই। বলি, না না, এখন এখানে ড্রিংক করতে বসলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।
ও শুধু অষ্ফুটে বলে, ও:।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.