নিজের কথার অর্থ বুঝতে পারে যেন এবার। একটু লজ্জা পায় মনে হলো। সঙ্গেসঙ্গে জবাব না দিয়ে হেসে মাথা নীচু করে। তারপর মুখ তুলে বলে, তুমি আমার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছো। আজকে এই যে নিশা, এতো আমার নতুন জীবন, নয়কি! তুমিই দিয়েছো। আমার সমস্ত সত্বাজুড়ে কি শুধু তুমিই থাকবে না!
থেমে থেমে কেটে কেটে বলে গেলো কথাগুলো। আমি খানিকটা অভিভূত হয়ে পরি সে মূহুর্তে। তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। কোন কথা সড়ে না মুখে। পাশ ফিরে ও ও তাকায়। চোখাচোখি হয় দু’জনার। দু’জনই হেসে দেই। তারপর দৃস্টি মেলে দেই নদীর বুকে।
এভাবে কেটে যায় বেশ কিছুক্ষন। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে থাকি ওপারে রাতের হংকংয়ের রূপ। আলো আধারিতে গোটা পরিবেশটা কেমন মোহনীয় হয়ে ধরা দেয় যেন। এক সময় আমি মুগ্ধ যাই। সম্বিৎ ফেরে পেছন থেকে হেলিমের ডাকে। দু’জনই ফিরি ওদের দিকে। বসেছিলো একটা বেঞ্চে। উঠে এসেছে। হেসে বলে ‘সরি, আই হ্যাড টু কল ইউ ব্যাক ফ্রম হেভেন!’
আমরা দু’জনও হেসে দেই ওর কথায়। হেলিম বলে, মনে হয় এখন বেশ রাত। ফিরবেন না আরো কিছুক্ষন থাকবেন।
নিশা শ’শব্যস্তে বলে ওঠে, না না এখন ফেরা যায়। একটু ঠান্ডামতোও লাগছে। সন্ধ্যায় বেশ গড়ম ছিলো। এখন শীত লাগবে জানলে শীতের কাপড় আনা যেতো। তাহলে আরো খানিকক্ষন থাকা যেতো।
হংকংয়ের আবহাওয়াটাই এমন। শীতে প্রচন্ড ঠান্ডা। সামারে দিনে গড়ম পড়লেও রাতে ঠান্ডা নামে বেশ। শেষ রাতের দিকে তো মনে হয় বাংলাদেশের অগ্রাহায়ন মাস। নদীর ধারটা এমনিতেই অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে। তার ওপর আজ কিছুটা বাতাস। আমরা আছিও প্রায় ঘন্টাখানেকের মতো। নিশার কথায় মনে হলো আসলেই বেশ ঠান্ডা লাগছে।
বলি, চলেন ফেরা যাক এখন।
আসলে হেলিমের তাড়া এখন গিয়ে বসবে বিয়ারের ক্যান নিয়ে। রাত এগারোটার ওপরে হয়ে গেছে। এখনো শুরু করতে পারলো না। আমি থাকছি না। রউফ সাহেব আবার বেশী রাত জাগতে পারেন না। একটু পর তাকে চলে যেতে হবে। হেলিম একা একা ড্রিংক করতে পারে না।
আমরা ফেরার পথ ধরি। তবে বেশ ভালো লাগছিলো এভাবে উদ্দেশ্যহীন ঘুড়ে বেড়ানোটা। রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত এ এলাকায় লোক থাকে। অবশ্য বারোটার পরও যারা ঘোরাফেরা করে তাদের থাকে নানা ধরনের মতলব। কোনা খামচিতে নর নারীর যুগল দৃশ্য এ সময় চোখে পড়তে থাকে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে কেউ কেউ আরো ঘনিস্ট হয়ে পরে। সে সব দৃশ্য চোখে পড়লে চোখ ফিরিয়ে নিতে হয়।
মিনিট দশেকের হাঁটা পথ। হেলিম রউফ সাহেবকে চুংকিংয়ের সামনে গুডবাই করে আমরা দু’জন এগোই মিরাডরের দিকে। হাতের বাঁ ধারে ফুটপাথ সংলগ্ন কিছুটা অংশ রেলিং দেয়া, সেদিন বাঙ্গালী ছেলেগুলো যেখানে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফুসফাস করছিলো। কয়েক পা এগোতে এসে যাই সেই জায়গাটায় যেখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম সে সন্ধ্যায় মহিলার ডাক শুনে। হাঁটতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। নিশা একটু অবাক হয়ে তাকায় আমার দিকে। আমি কিছু না বলে চোখের ইশারায় ওকে দেখাই সেই জায়গাটা যেখানে ও দাঁড়িয়েছিলো। আজও জায়গাটা অন্ধকার। কয়েক মূহুর্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার দৃস্টি অনুসরন করে তাকায় সেদিকে। এবার বুঝতে পারে। একটু হেসে মুখটা নীচু করে। আমিও হেসে পা বাড়াই।
লিফট পাওয়া যায় নীচেই। একটানে উঠে এসে কয়েক পা হাঁটলেই আমাদের গেস্ট হাউস। রুমে এসে লাইট জ্বেলে ধপাশ করে বসে পরি সোফায়। এতক্ষনে মনে হলো যেন ভীষন টায়ার্ড। একনাগাড়ে এতক্ষন হাঁটা দাঁড়িয়ে থাকায় কোমড় লেগে গেছে। নিশাও হাত ব্যাগটা ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে গিয়ে বসে ওর বিছানায়। শুধায় ‘টায়ার্ড?’
বলি ‘ইয়েস। লিটল্। ইউ?’
‘মী টু। বাট অলটুগেদার ইট ওয়াজ নাইস। আই এনজয়েড।’ বলে বালিশে হেলান দিয়ে গা’টা এলিয়ে দেয়।
আমি হালকা আড়মোরা ভেঙ্গে বলি, আসলে এ রকম হাঁটা হয় না তো। তাই হাঁপিয়ে গেছি। তবে ঠিক হয়ে যাবো। পাঁচ মিনিট।
বলে ‘টেক ইউর টাইম। নান অফ আস ইন হারি, রাইট?’
‘দ্যান টু গো বেড।’ বলে একটু হেসে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করি।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.