আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণীকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা সোমবার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে ঋণ শ্রেণীকরণ ও খেলাপিদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের কোনও অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উন্নয়নের জন্য এই নীতিমালায় দেওয়া হয়েছে। তাতে খেলাপির পরিমাণ কমবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নীতিমালা জারির পর সমালোচনার মুখে পড়ে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এসময় সহকারী মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঋণ দেখভাল ও নিয়মিত করার ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ঋণের টাকা ফেরত দেবেন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। তবে ভালো হউক আর খারাপ, তার দায় ব্যাংকের পর্ষদকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক তার গ্রাহকদের চেনেন। তাই তারা কোনও খেলাপিকে সুবিধা দেবে কিনা, কীভাবে রি-শিডিউল করবে; তা তারা ঠিক করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে, অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই বলেছিলেন, সেন্ট্রাল ব্যাংক অ্যাপেক্স বডি হিসেবে কাজ করবে। তবে জারি করা সার্কুলারে ঢালাওভাবে খেলাপিকে সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন গভর্নর যোগদানের পর এই প্রথম খেলাপিদের বড় ধরনের সুযোগ দেওয়া হলো।
জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে মাত্র ২.৫০ থেকে ৪.৫০ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। যেখানে আগে ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। এর আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক মালিকেরাই এখন ঠিক করবেন, ঋণ খেলাপিদের কী সুবিধা দেবেন। আগে যেখানে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত, যা স্বয়ং গভর্নর অনুমোদন করতেন।
তবে খেলাপি ঋণে সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাংক মালিকদের হাতে তুলে দিলেও জাল জালিয়াতি ও অনিয়ম-প্রতারণার ঋণ নতুন নীতিমালার আওতায় নিয়মিত করা যাবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য একটি ঋণ ৪ অর্থবছরের পর আরও একবার নিয়মিত করা যাবে।
জানা গেছে, করোনার কারণে দেওয়া ছাড় উঠে যাওয়ার পর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। নতুন করে অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি করোনায় অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে যে ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, তারও বড় একটা অংশ অনাদায়ী হয়ে পড়েছে। এ কারণে এখন সুযোগ দিয়ে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।