গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরে মস্কের একটি কার্গো বিমান সুদানের খার্তুম বিমানবন্দরের রানওয়েতে দাঁড়িয়েছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল বিমানটিতে রপ্তানির জন্য বিস্কুট লোড করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সুদান খুব কমই বিস্কুট রপ্তানি করে।
খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পিছনের অফিসে কর্মকর্তাদের মধ্যে তপ্ত বাকবিতণ্ডা চলছিল। তাদের আশঙ্কা, বিমানটিতে তল্লাশি চালালে তা দেশটির রুশপন্থী সামরিক নেতৃত্বকে ক্ষিপ্ত করবে। সন্দেহজনক রুশ বিমানটিকে আটকানোর আগে একাধিক প্রচেষ্টা আটকে দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তারা বিমানে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন।
বিমানের ভেতরে থাকা বিস্কুটের রঙিন বাক্সগুলি কর্মকর্তাদের সামনে হাজির করা হলো। বাক্সের উপরের সারিতে থাকা বিস্কুটের প্যাকেটগুলোর ঠিক নিচে লুকানো ছিল সুদানের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ- সোনা। সব মিলিয়ে এগুলোর ওজন হবে প্রায় এক টন।
ফেব্রুয়ারির এই ঘটনাটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছে একাধিক সুদানি কর্মকর্তা। গত দেড় বছরে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম মূল্যবান ধাতু উৎপাদক সুদান থেকে অন্তত ১৬টি রুশ বিমানে সোনা পাচার হয়েছে।
বেশ কয়েক জন শীর্ষ সুদানি ও মার্কিন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার এবং সিএনএনের হাতে আসা নথিগুলো পর্যালোচনার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধ জোরদার করতে সুদানের সম্পদ লুণ্ঠনের একটি বিস্তৃত রুশ পরিকল্পনার চিত্র পাওয়া গেছে। প্রমাণগুলি আরও ইঙ্গিত দেয় যে, রাশিয়া সুদানের বিপর্যস্ত সামরিক নেতৃত্বের সাথে যোগসাজশে দারিদ্র্যপীড়িত দেশটিকে কয়েক কোটি ডলারের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে। এর বিনিময়ে রাশিয়া সুদানের অজনপ্রিয় সামরিক নেতৃত্বকে রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন দিয়েছে।
সাবেক ও বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, রাশিয়া ২০২১ সালে সক্রিয়ভাবে সুদানের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিল। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্রান্তিকালীন বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করা হয় এবং সুদানের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
বিষয়টির সাথে পরিচিত একজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে জেনে আসছি, রাশিয়া সুদানের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে। এই সম্পদগুলো কজ্বায় রাখতে রাশিয়া সামরিক অভ্যুত্থানকে উৎসাহিত করেছিল। রাশিয়ার জন্য যেহেতু বাকি বিশ্বের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, সেহেতু রাশিয়া সুদানের জেনারেলদের সাথে সম্পর্ক রেখে এবং তাদের ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করার মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করেছে।
তিনি জানান, দুই পক্ষের মধ্যে সেই ‘সাহায্য’ প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহায়তা থেকে শুরু করে সুদানের সোনা চুরি করে যৌথভাবে লাভবান হওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।