ও ঘাড় নেড়ে ফোনটা নিয়ে কানে ঠেকায়। একটুপর কেউ ধরলে হ্যালো বলে ওঠে। এরপর চলতে থাকে তামিলে। আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে বালিশে হেলান দেই। রিমোট নিয়ে চ্যানেল বদলে চলি।
ভীষন উৎসাহে মোটামুটি মিনিট দশেক কথা বলে ‘বাই’ লাইন কেটে দেয়। ফোনটা ফিরিয়ে দিতে দিতে বলে, থ্যাংক ইউ।
‘ওয়েলকাম’ বলি।
বিষ্ময় কন্ঠে বলে চলে, আমি তো ভাবতেই পারিনি এত সহজে চেন্নাই কথা বলা যায়।
বলি, এটা ইন্টারনেটের যুগ। সারা পৃথিবী এখন মানুষের হাতের মুঠোয় না! যখনই ইচ্ছা করবে কথা বোলো, ওকে?
ঘাড় নেড়ে সায় দেয়।
শুধাই, বাসায় সবাই ভালো আছে?
বলে, হ্যাঁ।
তোমাকে নিয়ে চিন্তা করছে নাতো?
কিছুটা করছিলো কারন গত কয়েকদিন ফোন দেই নাই।
কি করছো জিজ্ঞাস করে নাই?
করেছে। বলেছি, এখনো কাজে জয়েন করি নাই।
মহিলার কথা জানতে চাই নাই?
চেয়েছে। বলেছি সে আছে। কথা বলতে চেয়েছিলো তার সাথে, বলেছি এই মূহুর্তে রুমে নাই। এরপর একটু হেসে বলে, সব শেষে জিজ্ঞেস করেছে আমি ভালো আছি কিনা!
তাকাই মুখের দিকে। বলে, বলেছি এখানে আমি একজন মহারানীর মতো আছি। আমাকে নিয়ে তাদের কোন চিন্তা করতে হবে না। কারন আমার ভগবান আমার টেককেয়ার করছেন।
টিপ্পনী কেটে বলি, সেই ভগবানের পরিচয় যখন জানতে পারবে! আজ না হোক কাল একদিন তো জানবেই। তখন!
একটু চুপ থেকে বলে, তাদেরও কি উচিত হবে না আমার মতোই আমার ভগবানকে মাথায় তুলে নেয়া!
সেটা তুমি আর তোমার পরিবার বলতে পারবে। প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিতে বলি, এরপর যখনই কথা বলতে মন চাইবে বোলো, লাগিয়ে দেবো। তবে আমার নম্বরটা বাসায় দিয়ে রাখা উচিত ছিলো। তারাও দরকার মনে করলে ফোন করতে পারতো।
বেশ খুশী হয়ে যায়। মাথা নেড়ে বলে, ঠিক আছে, পরেরবার যখন কথা বলবো নম্বরটা দিয়ে রাখবো, ওকে।
এবার দিনের কাজগুলো ঠিক করে নিতে হয়। ওর ফ্লাইট বুকিং দেয়ার তাড়া নাই, ট্রাভেল এজেন্টের কাছে না গেলেও চলবে। গেলো একটা। হেরিয়েলকে একবার ফোন দেবো কি! না থাক, কল দিলে যদি বলে কাল চলে আসো, একটা ভ্যাজাল লেগে যাবে। তার চেয়ে প্রগাম ঠিক করে ওই জানাক। মন চাইছিলো তা যেন অনেক পরে হয়।
তাহলে তো আর কাজ নাই। হংকং সাইডে কিকির অফিসে একবার যাওয়ার কথা আছে। বলেছে সময় করে যেন চলে আসি। কিন্তু গত তিনদিনেও তো ওকে ফোন করারই সময় পেলাম না! আজ যাওয়া যায়। না গেলেও চলে। চুংকিংয়ে হেলিমের ওখানে যাওয়া যায়। এখন না গিয়ে ও বেলায়ও যাওয়া যায়। তাহলে তো রুমেই থাকা যায় সারা দিন! মনটা লাফিয়ে ওঠে মূহুর্তে। তাহলে তো ও কাছছাড়া হচ্ছে না! এক সাথে কাটাতে পারি দু’জন সারা দিন। এখন যদি আমি যাই বাইরে ফিরতে ফিরতে ক’টা বাজবে জানি না। ভাবতেই মনটা মোচড় দিয়ে ওঠে। ও থাকবে না সাথে! যে ক’দিন আছি কাটাই না কেন মূহুর্তগুলো এক সাথে। ভালোই তো লাগছে এই সঙ্গ। এই কথাবার্তা!
পরমূহুর্তে শাষন করি মনকে। না:, সেটা ঠিক হবে না। এমনিতেই কাল সন্ধ্যা থেকে একসাথে আছি। একদম একান্তে। এক মূহুর্তের জন্যেও কেউ কাউকে ছাড়া না! বুঝতে পারছি এই সঙ্গ দু’জনেরই মন মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে চলেছে ভীষণভাবে। না না এভাবে বন্ধ কামড়ায় আর বেশীক্ষন থাকা ঠিক না। বাইরে যাওয়া দরকার। একটু মুক্ত পরিবেশে জনারন্যে ঘুড়ে এলে ভাবনার ডাইভারশন আসবে। মনের যে অবস্থা এ মূহুর্তে এটাই দরকার।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিশা বলে, কি ভাবছো?
বলি, আজকের কাজগুলো মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছি।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.