বিদেশে একটি সহজ চাকরি, বড় বেতন এবং এমনকি ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের সাথে চমকপ্রদ হোটেলে থাকার সুযোগও রয়েছে। কম্বোডিয়ায় টেলিসেল রোলের বিজ্ঞাপনটি দেখে একে লোভনীয় প্রস্তাবই মনে করেছিলেন তাইওয়ানের ইয়াং ওয়েইবিন। এরপর কোনো ভাবনা-চিন্তা না করেই নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সোজা উড়াল দেন কম্বোডিয়ায়।
কম্বোডিয়ার রাজধানীতে পৌঁছার পর নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের কর্মী পরিচয়ে বেশ কয়েকজন ইয়াং ওয়েইবিনকে একটি গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। তারা তাকে একটি নির্জন সড়ক ধরে পুরোনো-জীর্ণ একটি ভবনে নিয়ে যায়। এটি সেই নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের ছবি পাঠানো বিলাসবহুল হোটেল নয়। ওই বাড়িতে নিয়ে ইয়াংয়ের পাসপোর্ট ও কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। একটি ছোট খালি ঘরে তাকে থাকতে দেওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসা লোকগুলো যাওয়ার সময় ইয়াংকে বলে যায়, এই বাড়ির আঙ্গিনা ছেড়ে সে কখনোই বের হতে পারবে না।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়াং বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারলাম যে, আমি ভুল জায়গায় এসেছি, এটি খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতি।’
ওয়েইবিন এমন হাজার হাজার শ্রমিকের মধ্যে রয়েছেন যারা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চাকরি প্রতারণার কবলে পড়ে মানবপাচারকারীদের শিকার হয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, হংকং ও তাইওয়ানসহ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে এই চক্র এখন সক্রিয়।
সহজ কাজ এবং অসাধারন সুবিধার প্রতিশ্রুতির বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই কম্বোডিয়া, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে যাওয়ার ব্যাপারে প্রতারিত হন। একবার সেখানে পৌঁছলে, তাদের বন্দী করা হয় এবং ‘জালিয়াতির কারখানা’ নামে পরিচিত অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্রে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
মানবপাচার দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি স্থানীয় সমস্যা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধী চক্রগুলো এখন আরও দূরের মানুষদের খুঁজছে। তাদের লক্ষ্য এখন অল্পবয়সী, ভালো শিক্ষিত, কম্পিউটার শিক্ষিত এবং একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে সক্ষম তরুণ-তরুণী। এদের দিয়ে অনলাইনে ক্রিপ্টো কারেন্সি জালিয়াতি, প্রেম প্রতারণা, অর্থ পাচার এবং অবৈধ জুয়ার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে পাচারকারীরা।
ভিয়েতনামের চি টিন বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাকে নারীর ছদ্মবেশ ধরে ছবি তুলতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং অনলাইনে অপরিচিতদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রতিদিন ১৫ জন বন্ধু তৈরি করে তাদেরকে অনলাইন জুয়া এবং লটারির ওয়েবসাইটে যোগদানের জন্য প্রলুব্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছিল… এদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের গেমিং অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে রাজি করাতে হয়েছিল। ম্যানেজার আমাকে বলেছিল, পালানোর চেষ্টা করলে বা প্রতিরোধ করলে টর্চার রুমে নিয়ে যাওয়া হবে… আরও অনেকে আমাকে বলেছে তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করলে তাদের ক্ষুধার্ত রাখা হতো এবং মারধর করা হতো।’