‘চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড় ধরা’— এই কথা আমাদের খুব চেনা। তবে ধরা পড়েছেন তিনি। নাম মো. জব্বার। ৫০ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০টি বাড়িতে চুরি করেছেন। প্রথম ২৭ বছর ছোটখাটো করলেও গত ২৩ বছর বাসার-বাড়ির দরজা জানালা ভেঙে বড় চুরি করে আসছিলেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রোববার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চোরচক্রের সর্দার মো. জব্বার মোল্লাহ (৬৭), মো. জামাল সিকদার (৫২), মো. আবুল (৫১), আজিমুদ্দিন (৫২), টঙ্গী এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আনোয়ার হোসেন (৪৪) ও তাঁতিবাজার এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আব্দুল ওহাব (৪৫)।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, ১৭ আগস্ট রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার একজন ডাক্তারের বাসায় জব্বার তার দলবল নিয়ে চুরি করে। বাসা থেকে ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ৪০০০ ইউএস ডলার চুরি করে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় মামলা হলে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ। তদন্তের এক পর্যায়ে শনিবার (৮ অক্টোবর) মিরপুর পল্লবী এলাকার একটি বাসায় ঢুকে চুরি করার সময় হাতেনাতে চোরচক্রের ৪ সদস্য ও ২ জন জুয়েলারি দোকানের মালিককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ।
এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৯ ভরি স্বর্ণালংকার, ৮২ ভরি রূপা, নগদ প্রায় ১৭ লাখ টাকা, দরজা ভাঙার যন্ত্রপাতি ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। চোরচক্রটির সর্দার মো. জব্বার মোল্লাহর বয়স ৬৭ বছর। সাদা পাঞ্জাবি-লুঙ্গি, মাথায় টুপি এই বেশভূষা তাদের প্রধান হাতিয়ার। চুরির আগে দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পরা থাকায় কোনও অপরিচিত ভবনে উঠলেও প্রাথমিকভাবে কেউ তাদের সন্দেহ করতো না। চুরির আগের দিন তারা রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ঘুরে সুবিধামতো একটি বাসা ঠিক করতো। যেসব বাসার দরজা লক করা থাকতো সেসব বাসা তারা টার্গেট করতো। পরে সেই বাসায় বিশেষভাবে তৈরি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে দরজা ভেঙে চুরি করে ।
হারুন অর রশীদ বলেন, জব্বারসহ চক্রটির সদস্যরা ৮-১০ বছর বয়সে ঢাকার কাওরান বাজার, মিরপুরসহ সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকায় টোকাই ছিল। এসময় তারা বাসা-বাড়ির ছাদে রোদে দেওয়া জামাকাপড়, জুতা, রড ইত্যাদি চুরি করে বিক্রি করতো। চোরাই মাল বিক্রি করতে গিয়ে একে অন্যের সাথে পরিচিত হয় এবং তারা একত্রে শুরু করে। গত ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে চুরি করা শুরু করে তারা। চুরি করার আগের দিন তারা কথা বলে ঠিক করে কোথায় চুরি করবে। সে মতে পরদিন সকালে তারা ওই এলাকায় হাজির হয়। একত্রে চা পান করার পর তারা হাঁটতে থাকে। খেয়াল করে দেখে কোন বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। বাসা টার্গেটের পর দুই জন বাসার ভেতর প্রবেশ করে। বাকি ২-৩ জন বাইরে পাহারায় থাকে। ১০ মিনিটের মধ্যে চুরি শেষ করে মালামাল ভাগ করে নিয়ে যে যার যার এলাকায় চলে যায়। পরদিন আবার অন্য কোথাও চুরির পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, তারা শুধু মূল্যবান অলংকার ও বিদেশি কারেন্সি, টাকা ইত্যাদি চুরি করে। চোরাই করা স্বর্ণালংকার ঢাকার তাঁতিবাজারের দুটি দোকান এবং টঙ্গী বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জব্বার জানায়, সে প্রায় ২০০ বাড়িতে এখন পর্যন্ত চুরি করেছে। এই দীর্ঘ সময় বাসা বাড়ি থেকে চুরি করা প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণ তিনি তাঁতিবাজার এলাকায় বিক্রি করেছেন। ২০০ ভরি স্বর্ণ তিনি টঙ্গীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করেছে। দরজা বন্ধ, কেউ নেই- এমন বাসায় সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে সিসি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তা প্রহরী নেই বাসায় ঢুকে পড়েন জব্বার ও তার সহযোগীরা। বাসায় ঢুকে আলমিরা ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও ডলার চুরি করেন তারা।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে