স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের পর যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সেসব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে সংস্থটি।
বুধবার (২ নভেম্বর) ঢাকায় সফররত আইএমএফ-এর প্রতিনিধিদল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব বিষয়ে জানতে চায়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং আইএমএফ-এর ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিশন প্রধান রাহুল আনান। এসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত মিশনটি ধারাবাহিক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে সভা করবেন। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে দলটি সভা করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায়, আইএমএফ জানতে চায়- মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কী করছে। জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এফটিএ করার উদ্যোগ ন্য়ো হয়েছে বলে জানানো হয়। আগামীতে নেপালের সঙ্গেও চুক্তিটি হতে পারে। ওই বৈঠকে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের বহুমুখীকরণ পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানোর পর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি কী রয়েছে বাংলাদেশের জানতে চায় সংস্থাটি।
এছাড়া সভায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছানোর পর বাংলাদেশের রফতানি বাজার ও পণ্য রপ্তানি নিয়ে প্রস্তুতির বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, প্রস্তুতি, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। রপ্তানি বক্সে আরও পণ্য অর্ন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
সভায় প্রতিনিধিদলটি ট্যারিফ হার যৌক্তিকরণ করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চায়। এর জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা ট্যারিফ পলিসি প্রণয়ন করছি। এছাড়া যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে আরোপিত কাস্টমস শুল্ক ডব্লিউটিও-এর বন্ড ডিউটি হার সীমা অতিক্রম করেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক হার উক্ত সীমার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি মিনিমাম ইমপোর্ট প্রাইজ ব্যবস্থা, ডব্লিউটিও এগ্রিমেন্ট অন কাস্টমস ভ্যালুয়েশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সে কারণে আলোচ্য মিনিমাম ইমপোর্ট প্রাইসকে পর্যায়ক্রমে ফেইজ-আউট করা হবে। পর্যায়ক্রমে আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য প্যারা-ট্যারিফ এবং সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হবে।
বাংলাদেশে ব্যবসা ব্যবসা শুরু করা কঠিন। এটা সহজ করার বিষয়ে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চায় সংস্থাটি। ট্যারিফ যৌক্তিকরণ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে- ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে আরও জোরদার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের আইন (সংশোধন) পাশ হয়েছে। বর্তমান এ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান অর্গানোগ্রামকে যুগোপযোগীকরণ করে নতুন অর্গানোগ্রাম প্রণয়নের কাজ চলছে। এছাড়া ব্যবসা সহজ করার বিষয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা আরও সহজ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।