হোসনে আরা জেমী
কিভাবে লিখবো, কি লিখবো ভাবতে ভাবতে আমার দুদিন চলে গেল, যাকে নিয়ে লিখতে বসেছি তাকে নিয়ে লেখার সাহস দেখাবো সে সাহস আমার নেই। তবুও আমার দেখা মহান মানুষটিকে আমার মতো করে তুলে ধরার প্রচেষ্টা।
যার ছবি দেখে আমি বড় হয়েছি তিনি আর কেউ নন তিনি আমার বাবার আদর্শ মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি ছিলেন বঙ্গের এই বাংলার বন্ধু সেই সাথে গোটা বিশ্বের বন্ধু বঙ্গবন্ধু। যাকে আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার বাবার কাঁধে উঠে।
বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন উনিও থাকবেন অমর হয়ে বাংলাদেশ নামক কাব্য গ্রন্থের। উনি রচনা করতে পারলেন না তাঁর অমর কাব্য গ্রন্থ বাংলাদেশ। সোনার বাংলা গড়তে যে তিনি মাত্র ৫৫ বছর বয়সে চলে গেলেন ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে। না অন্য কারও হাতে নয় তার সোনার বাংলার সোনার মানুষের হাতেই চলে গেলেন কোন প্রতিবাদ না করেই।
এই মানুষটি কিনা বাংলার প্রতিটি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। যার একটি ডাকে ৫৫ হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্য। উপহার দিলেন একটি পতাকা, একটি দেশ, সোনার দেশ বাংলাদেশ।
জীবিত থাকাকালীন তিনি যেমন ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে তেমনি মৃত্যুর পরও তার কীর্তি পৌঁছে গেছে গোটা বিশ্বে। সদ্য জন্ম নেওয়া সোনার দেশ গড়ার আগেই মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে হত্যা করা হলো সপরিবারে। কিন্তু তাতে কি হয়েছে উনি হয়েছেন আরও শাণিত আরও উজ্জ্বল আমাদের কবিতায়, গানে, গল্পে, উপন্যাসে, চিত্রকলায়, সিনেমায় ও তথ্যচিত্রে উনি রয়েছেন মহান হয়ে।
বাংলাদেশের জন্মদাতা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। তিনি ছিলেন বিশ্বের দরবারে একটি ক্ষণজন্মা পুরুষ। বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়া বঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করেন “তিনি এমন একজন বিশাল ব্যাক্তিত্ব যার সামনে মাথা নুইয়ে আসে”।
বিবিসির জরিপে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নির্বাচিত করেন তিনি হচ্ছেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রবাসের প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের মতে “শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব”। “মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই জন্ম নিত না”। আর ফিদেল কাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করেছেন হিমালয়ের সাথে তিনি বলেছেন “আমি হিমালয় দেখিনি তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি”। আর এসব আমি এখন বড় বেলায় এসে পত্রিকা, গুগল ও বই পড়ে জেনেছি। আর যেদিন থেকে আমি কবিতা পড়তে বা আবৃত্তি করতে শিখেছি সেদিন থেকেই কণ্ঠে তুলে নিয়েছি আমার জাতির পিতাকে নিয়ে লেখা কবিতা। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর কবিতায় উচ্চারণ করলেন,
‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ
গতকাল আমাকে বলেছে আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি। শহীদ মিনার ভেঙ্গে খসে পড়া একটি রক্তাক্ত ইট গতকাল আমাকে বলেছে
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি। আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি’।”
অন্নদাশঙ্কর রায় লিখে গেছেন “যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান। ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান”। আর বাঙালি মুখে থাকবে বঙ্গবন্ধু। উনি তারা হয়ে আছেন আমারদের অন্তর আকাশে সেই সাথে সারা বিশ্বের দরবারে। তাই আমার কবিতায় আমি লিখি
হারিয়ে গেছে যে তারা
_________________
সেই রেসকোর্স ময়দান আর নেই
সেখানে দাঁড়িয়ে আছে শিখা অর্নিবাণ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেখানে কি ছিল সেদিন
আমার দেখা হয়নি
সেই দিনে মুক্তিকামী মানুষ দেখছিল তোমায়
একটি কবিতায় তারা হয়েছিল মুক্তিকামী
এই উন্মুক্ত ময়দান থেকে স্বাধীনতার খবর পৌঁছে গেছিল পঞ্চান্ন হাজার বর্গ মাইল জুড়ে
সেদিন থেকেই বাংলার আকাশের সকল প্রানী স্বাধীনতার স্বাদ নিতে শিখেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পলাশের ডালে বসে থাকা
টিয়ের নাচন আমি দেখেছি আজ
সেদিনও কি এমনি ছিল সেই উদ্যান
মুগ্ধ হয়ে শুনেছিল তোমার কবিতাখানি।
সেদিনের পথশিশুটিও তোমার কবিতায় মগ্ন হয়ে
শপথ নিতে ভুল করেনি মুক্ত স্বদেশের।
স্বপ্ন দেখেছিলো নতুন মানচিত্র
স্বপ্ন দেখিয়েছিলো একটি নতুন ভূখন্ডের
আগুন জ্বলেছিলো শিড়ায় উপশিরায়
মুক্তিকামী মানুষ তোমার একটি ডাকে
ঝাপিয়ে পড়েছিল একটি ফুল ফোটানোর জন্য।
ফুল ফুটেছিলো, প্রতিটি মানুষের দ্রোহের আগুনে পুড়ে পুড়ে যে ফুল
সে ফুলের নাম বাংলাদেশ
সে ফুলের নাম শেখ মুজিব
সেই ফুল আজ তারা হয়ে হারিয়ে গেছে
আকাশের হাজার তারা