স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এক সময় দমকল বাহিনী বলে অবহেলা করা হতো। এখন দুঃসময়ের বন্ধু মনে করা হয় ফায়ার ফাইটারদের। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জান-মাল রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে মিরপুরের ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২-এর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘দুর্ঘটনা-দুর্যোগ হ্রাস করি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ি’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমানে উন্নীত করতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ একাডেমি হচ্ছে। সাথে ফায়ার সার্ভিসের জনবল ৩০ হাজারে উত্তীর্ণ করার লক্ষ্যে অর্গানোগ্রাম গঠনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কাজ এগিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে অর্থাৎ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ছিল মাত্র ২০৪টি। বর্তমানে বাংলাদেশে চালু ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৯১টি। বর্তমান সরকারের আমলে ২৮৭টি নতুন ফায়ার স্টেশন চালু করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এর মধ্যে আরো ৫২টি ফর স্টেশন চালু করা হবে। ভার্সনের মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৪৩টি। প্রধানমন্ত্রী ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জনবল বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০০৯ সালে মোট জনবল ছিল ৬ হাজার ১৭৫ জন। বর্তমানে তা ১৪ হাজার ৪৪৩ জন।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দক্ষতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের জন্য দেশের মাটিতেই বিশ্বমানের সুবিধা সম্বলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হলে একই সাথে ফায়ার সার্ভিসের এক হাজার সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, বিদেশী কোন ফায়ার কর্মী এসেও এখানে উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
তিনি জানান, ২০০৯ সালে বহুতল ভবনের কাজ করার মত যেখানে মাত্র একটি ৪৭ মিটারের পুরোনে গাড়ি ছিল, সেখানে বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য এখন ২৮টি মইয়ের গাড়ি আনা হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের সর্বাধিক উঁচু ৬৪ মিটার লেডার সম্বলিত গাড়ি ফায়ার স্টেশনের যান্ত্রিক বহরে যোগ হয়েছে। কোন ফায়ার সার্ভিসের সার্ভিস এখন ২২ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনুদান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে ২০ কোটি টাকা দিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা ৬৩টি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় তা ১৯০টি উন্নীত হয়েছে। সব স্টেশনে পর্যায়ক্রমে সব ফায়ার স্টেশনে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। রেশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, ঝুঁকিভাতা চালু করা হয়েছে, কর্মীদের জন্য নতুন পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে। পদকের সংখ্যা ও সম্মানী বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফায়ার ফাইটারসহ কয়েকটি পদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সক্ষমতা বাড়ানোর কারণে এই প্রতিষ্ঠান কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে দমকল বাহিনী বলে অবহেলা করলো সেই ফায়ার সার্ভিসকে দুঃসময়ের বন্ধু মনে করে এই ফায়ার ফাইটরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জানমাল রক্ষার জন্য তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা আগে দেখেছিলাম, আগুন ধরে নিভে যাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো যেতো। এখন কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার সার্ভিসের লোকজন মানুষকে উদ্ধারের জন্য, অগ্নিনির্বাপণের জন্য পাশে দাঁড়াচ্ছে।