গত বছর পত্রিকার একটি হেডলাইন ছিলো ‘হাত খরচ চাওয়ায় স্ত্রীকে হত্যা করলেন স্বামী’- এই লেখাটি পড়ে কিছুটা স্তব্ধ হয়েছিলাম এবং ভাবনার আয়নায় এ সমাজের বোবাচিত্র ভেসে উঠলো।আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন,আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখতে পারতেন তবে আমার কাছে বিষয়টি যেমনটা স্পর্শকাতর মনে হয়েছে তেমনি এক বোবা অসহায়ত্বের চিত্র আমাকে বার বার আঘাত করেছে।শ্রমজীবী নারীরা হয়তো নিজের রোজগার থেকে হাত খরচ রাখতে পারে তদুপরি নিম্নবিত্ত সমাজে শ্রমজীবী নারীকেও স্বামীর কাছে এই বিষয়ে কখনো কখনো কৈফিয়ত দিতে হয়।আমি যখন লেখাটি লিখছি তখন এ দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ গৃহিণীর কথা বলছি যারা গৃহে থেকে নিরন্তর শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন পরম মমতায় অথচ বেশির ভাগ পরিবার ই তাদের হাত খরচের মতো একটা স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে ভাবছেনা।প্রত্যেক নারীর একান্ত নিজস্ব কিছু খরচ থাকে যে বিষয়টা হয়তো মুখ ফুটে কখনো বলতে পারেনা। মধ্যবিত্ত পরিবারে,আপনার আমার মা-বোন-কন্যা কিংবা বৃদ্ধ দাদী তাদের একান্ত নিজস্ব খরচের বিষয়টি হয়তো আপনাকে সরাসরি বলতে পারেনা অথচ ঘরে তারা যে শ্রম দিচ্ছে তা যদি অর্থনীতির মানদণ্ডে নেওয়া হতো তাহলে সেটা আমাদের জিডিপি’র ৪৮ শতাংশ হতো।আজ আমরা যে সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেখানে নারীর সাধ- আহ্লাদের কতোটুকু মূল্যায়ন করা হয় তা আশেপাশের পরিবারের দিকে তাকালে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হবে আপনার চোখে।ছোট্ট বেলায় গ্রামে দেখেছি,মা-চাচীরা কর্তার অবর্তমানে কখনো ধান-চাল বিক্রি,কখনো দুধ-ডিম বিক্রি করে নিজেদের নিতান্ত প্রয়োজন পূরণ করতেন।শহরতলির নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা পরিবর্তন হলেও গ্রাম্য নারীর ক্ষেত্রে আদতে কোন পরিবর্তন ঘটেনি।এই সমাজের পরিবর্তন,আপনার আমার হাত ধরেই ঘটাতে হবে।আমাদের জীবনপথে নারীর ব্যাপ্তি অনেক বেশি,এই সমাজে নারীর প্রতি আরো অনেক অসংলগ্নতা রয়েছে তবে আজকের আলোচনায় যে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে বলা যায়- আজ হতে আপনার ছেলের হাত খরচ দেওয়ার পাশাপাশি মেয়ের হাত খরচের বিষয়টি ভাবনায় রাখবেন,আপনার হাত খরচের পাশাপাশি আপনার স্ত্রী কিংবা মায়ের হাত খরচের বিষয়টি ভাবনায় রাখা জরুরি।গৃহে নারীরা যে শ্রম দিচ্ছেন সেটার অর্থনৈতিক মূল্যায়ন আমরা করতে পারছিনা তবে তাদের শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে হাত খরচের মতো মামুলি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে যেন আমাদের মা,বোন,কন্যা,স্ত্রী বিব্রত না হন।
লেখক-কৃষিবিদ কামরুল হাসান কামু
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.