সারা দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালিটি সার্ভিস চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেছেন, ‘এটি চালু হলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর প্রেশার কমবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে মৃত্যুর হারও কমবে। এজন্য সরকারিভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ওয়ানস্টপ ইমার্জন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালিটি সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যদি সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে দেশে অনেক মৃত্যু কমানো সম্ভব হবে। উন্নত বিশ্বে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ইমার্জেন্সি সার্ভিসের কারণে স্ট্রোক, সড়ক দুর্ঘটনা, হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিল রোগে আক্রান্তরা বেঁচে যায়।’
টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকাদানে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। এত অল্প সময়ে এত বিশাল সংখ্যক মানুষকে আমরাই প্রথম টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। এটা কেবল আমাদের কথা নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘কোভিডের সময় আমরা নতুন নতুন হাসপাতাল তৈরি করেছি। পুরনো হাসপাতালের সেবার পরিধি ও মান বাড়িয়েছি। ১০ হাজার চিকিৎসক, ১৫ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দিয়েছি। মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা চালু রেখেছি। আমরা চাই, আমাদের দেশের কোনো রোগী যাতে বিদেশে না যায়। এজন্য প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি সব হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু হলে রোগীদের ভিড় কমবে। দ্রুততম সময়ে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
ওসেক প্রকল্প বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘এক ছাদের নিচে ইমার্জেন্সি রোগীর অত্যাধুনিক সব সেবা দেওয়ার উদ্যোগ এটি। প্রথম পর্যায়ে আমরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মডেল হিসেবে এ সার্ভিস চালু করেছি। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইউএসএইড আমাদের সহায়তায় করেছে। এছাড়াও আছে আইএফআরসি ও বিডিআরসিএস।’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবির বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় ইতোমধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কোভিডের সময় আমাদের এখানে ২০ হাজার ২৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। কোভিডকালে প্রায় ৯৩ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন। অন্যত্র পাঠাতে হয়েছে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ মানুষকে। মারা গেছেন মাত্র ৩ শতাংশ রোগী।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফসানা আলমগীরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাবিব হাসান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাইদুর রহমান, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তররে মহাপরিচালক রাশিদা আক্তার এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের কান্ট্রি হেড সানজিদ কুমার কাফলে প্রমুখ।