একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতো এবারও বিএনপির নেতৃত্বে যে ৫৪ দলীয় জোট হয়েছে, তা খুব বেশিদিন থাকবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির আন্দোলন ‘রিমোট কন্ট্রোলে চলে’ এবং দলটির রাজনীতি বিদেশি নিষেধাজ্ঞানির্ভর হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য তার।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
টকশোতে গিয়ে বিএনপি নেতারা ‘পথহারা পথিকের মতো’ কথা বলেন, মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কী করবে, কী বলবে, কী কর্মসূচি দেবে—এ নিয়ে ৫৪ দল, ৫৪ পদ, ৫৪ মত। এ দল ছোট হয়ে আসবে, বেশি দেরি নেই। বামে-ডানে একাকার। অতি বাম, অতি ডান। এই দৃশ্যপট থাকবে না। গতবারও দেখেছি। ২১ দলীয় জোট শেষ পর্যন্ত জোটের নেতা কামাল হোসেনই আউট। এখন তো অদৃশ্য রিমোট কন্ট্রোলে বিএনপি চলে।’
‘বিএনপি জোটের আন্দোলন চলে রিমোট কন্ট্রোলে অদৃশ্য নির্দেশে। আর বিদেশিরা কখন সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের ওপর নির্ভর করে তাকিয়ে আছে। লবিং করছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য। জনগণ নেই, এখন নিষেধাজ্ঞা এবং অদৃশ্য ইশারায় তাদের রাজনীতি। এই অবস্থায় তারা এসে গেছে।’
আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দুর্বলভাবে না, জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগবিরোধী সকল শক্তি এবং বেশকিছু অপশক্তি এখানে জোট গঠন করেছে বিএনপির নেতৃত্বে। আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব আমাদের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের যে রূপকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন আমরা করে যাব।’
সরকারে পেছনে আজরাইল ঘুরঘুর করছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখন কত কথা বলে। এখন বুঝতে পারছি, কারা শেখ হাসিনাকে মেরে জানাজা করে সমাহিত করে ফেলেছে। কারা এই নষ্ট রাজনীতি করে। এখানে প্রশ্ন আজরাইল নাকি সরকারের পেছরে ঘুরঘুর করছে। তোমরা জানো কিভাবে? তোমরা কি আল্লাহর ফেরশতা নাকি মির্জা ফখরুল? আপনি কি আল্লাহর ফেরশতা? আপনি কিভাবে জানেন, আজরাইল কার পেছনে ঘুরঘুর করছে।’
এ সময় তার মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাকে তো কয়দিন ধরে মারছে। এখন আবার হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। গভীর রাতে ফোন আসে, আপনি কি হাসপাতালে? আমি বলি, না, আমি তো বাসায়। আবার ফোন করে বলে কয়েকদিন আগে, বেঁচে আছেন, ভাই? কেন? আমরা তো শুনেছি আপনি মরে গেছেন। আমাদের ইন্তেকাল পর্যন্ত তারা করিয়ে ফেলেছে। কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন আজরাইল লাগায় দিছে। আজরাইল সরকারের পেছনে ঘুরঘুর করছে।’
‘ফখরুল সাহেব আল্লাহ কবে আপনাকে ফেরশেতা বানালো? অথবা নবী বানালো? কেউ কি জানে? কেউ জানে না। সব আজগুবি খবর, নষ্ট রাজনীতি। এই নষ্ট রাজনীতি এবং নষ্ট কথা তারাই বলে। কি ভয়াবহ! কোনো দেশের রাজনীতিতে এই সংষ্কৃতি কি আছে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলছে। এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এরকম ভয়াবহ গুজব ছড়ায়। এটা বিএনপি এবং তাদের দোসররাই করে। এখন আজরাইলের খবর থেকে আমার এ কথাই মনে হচ্ছে।’
জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, মির্জা ফখরুলের অপর এক মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা কেমন করে হলো? এটা তো শুনিনি। জানি না। এই আজগুবি আওয়াজ কোথা হতে দেয়? ফখরুল মাঝে মাঝে এমন উদ্ভট কথা বলে। জিয়াউর রহমান পারলে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেয়। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড ঘটানোই হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধকে শেষ করার জন্য। তিনি করবেন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা?’
‘ফখরুল সাহেব একটু ব্যাখ্যা করেন, কিভাবে করলেন? তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল কেন? জয় বাংলা নিষিদ্ধ হলো কেন? বাংলাদেশ বেতার রেডিও বাংলাদেশ হলো কেন? ৭ মার্চ নিষিদ্ধ হলো কেন? মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধ পদধুলিত হলো কেন? স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস করা হলো কেন? আপনাদের লক্ষ্যই হলো আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আপনাদের রাজনীতি। সেটা বললে আপনাদের অনেকেরই অন্তরজ্বালা হয়’, বলেন তিনি।
এ সময় ওবায়দুল কাদের সম্প্রাতিক একটি টকশো’র বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনার জীবন নিরাপদ নয়। সে কথা বলেছি। সেটা নাকি মহা অন্যায় আমি করে ফেলেছি।’
‘এই দেশে চোখের পলকে ১৫ আগস্ট ঘটে গেছে। আমরা সতর্ক থাকব না? নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ কি ভিত্তিহীন? আমাদের বলতেই হবে। বিশ্বাসঘাতক তো আছেই। বিশ্বাসঘাতক যদি না থাকত ১৫ আগস্ট ঘটত, এটা কি কারো বিশ্বাস হবে? জিয়াউর রহমানের বিশ্বাসঘাতকতা, খন্দকার মোশতাকের বিশ্বাসঘাতকতা, এইসব বলতে গেলে আপনাদের গাত্রদাহ হয়। বিশ্বাসঘাতকতাই তো রক্ত ঝরিয়েছে।’
বাকশালের সমালোচনাকারী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দরখাস্ত করে বাকশালে যোগ দিয়েছে। এখন বাকশাল নিয়ে গালিগালাজ করে। অথচ, জিয়া বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত দিয়ে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। সে-ই পরে ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড।’
বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাতে কোনো প্রকার সংঘাত বা উস্কানি যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ঢাকা সিটিতে তারা পাল্টাপাল্টি বললেও আমরা আমাদের কর্মসূচিতে বলেছি, ডিসেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কোনটা কবে হবে, তা আমরা বসে ঠিক করব। তবে সতর্ক থাকা, গণসংযোগ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা, আগুনসন্ত্রাস এবং ভাঙচুরের যেসব ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা দেয়, এসব ঘটনার বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি বিরতিহীন আগামী নির্বাচন পর্যন্ত। পাল্টাপাল্টির এখানে কোনো বিষয় নেই।’
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।