জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারো দয়া-দাক্ষিণ্যে নয়, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় কৃষক পার্টির সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, একটি দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো। সাধারণ মানুষই দেশের মালিক হবে। দেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে কারা-কিভাবে দেশ চালাবে। যদি ঠিকমতো দেশ না চলে তাহলে দেশের মানুষ আবার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন ও সরকার পরিবর্তনই হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা। শহীদের রক্তের সাথে আমরা কখনোই বেঈমানি করবো না। আমরা শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করবো।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ সুশাসন চায়, দেশের মানুষ ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চায়। যেখানে গরীব ও দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়াবে সরকার। আমাদের সরকার গরীব ও দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। দেশের সম্পদ লুট করে যারা হাজার কোটি টাকার মালিক, তাদের পাশে দাঁড়ায় সরকার।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়, আমলাতন্ত্রের যোগসাজোসে কিছু ব্যবসায়ী নামধারী লুটপাট করে দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। কোন ব্যবসা নেই, কিন্তু হাজার-কোটি টাকা আয় করছে তারা। যারা দেশের মানুষের সম্পদ লুট করছে তাদের জন্যই সরকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, দেশে লুটপাটের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে। যে যত লুটপাট করতে পারবে, সে তত সম্মানিত ব্যক্তি। যে যত বড় লুটেরা সে তত দেশপ্রেমিক হিসেবে গলায় মালা নিয়ে ঘুরবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা দেশের জন্য ভালো কাজ করতে চাচ্ছেন, তারা যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না।
পুলিশ কৃষকদের হয়রানি করছে অভিযোগ করে কাদের বলেন, কৃষকদের বাঁচাতে যতটা ভর্তুকি লাগে তা সরকারকে দিতে হবে। ডলার সংকটের কারণে সরকার সব জমি কৃষি কাজের আওতায় আনতে উপদেশ দিচ্ছেন। কিন্তু, যারা কৃষিকাজ করে দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখছেন, তাদের বাঁচিয়ে রাখতে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখলে আমরা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবো না। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনে কৃষি ঋণ মওকূফ করতে হবে। ব্যাংক থেকে যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়, তাদের ঋণ সরকার মাফ করে দেয় কিন্তু কৃষকের ১০ হাজার টাকা ঋণ মওকূফ হয়না। লুটেরারা হাজার কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক ফাঁকা করে ফেলে আর কৃষকদের টাকায় সেই ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ব্যাংক লুটেরাদের জন্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা হয় না, রিশিডিলিউয়িংয়ের মাধ্যমে তাদের উপরের দিকে তোলা হয়। ব্যাংক লুটেরাদের এমপি- মন্ত্রী বানানো হয়। আবার, ১০ হাজার টাকা ঋণের জন্য কৃষক ঘরে ঘুমাতে পারে না।
তিনি বলেন, দেশের কৃষকদের বাঁচাতে পল্লী রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী যেনো সাধারণ কৃষকের নাগালের মধ্যে থাকে সেজন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যে মূল্য কৃষকরা দিতে পারে, সেই মূল্যেই তাদের নিত্যপণ্য দিতে হবে। দেশের এমন দুর্দিনে আমাদের কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কৃষক ঋণ খেলাপী হয়ে নির্যাতিত হলে, কৃষকের প্রয়োজন হলে ন্যায্য মূল্যে সার না পেলে অথবা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জাতীয় পার্টি তাদের পাশে থাকবে। কৃষকরা যেনো ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার বাজারে কোন পণ্যের দাম যদি ৫০০ টাকা হয়, গ্রামের কৃষক কেন ১০০ টাকার কম পাবে? কৃষকরা যেনো ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য জাতীয় পার্টির নেতা-কমীঁরা প্রয়োজনে আন্দোলন করবে। ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, ৬৮ হাজার গ্রামের কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কৃষিতে নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। ৭৪ সালে সাত কোটি মানুষের দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে আর এখন ১৮ কোটি মানুষের দেশে খাদ্য সংকট হচ্ছে না।
তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু উপজেলা পরিষদ সৃষ্টির মাধ্যমে ১৮ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিলেন। তারা কৃষি ও পশুপালন থেকে শুরু করে দেশের গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট আর দলবাজীর কারণে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাতীয়, কৃষক পার্টির সভাপতি সাহিদুর রহমান টেপার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদারের সঞ্চালনায় জাতীয় কৃষক পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শেখ আলমগীর হোসেন, শেখ হুমায়ুন কবির শাওন, কাজী জামাল উদ্দিন, রমজান আলী ভূঁইয়া, আব্দুল কুদ্দুস শাওন আবুল কাশেম, মো. মইনুদ্দিন খান, মো. মনির উদ্দিন, এনামুল হক বেলাল, প্রকৌশলী এম মুনিম চৌধুরী বুলবুল, খান মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী, গাজী মো. মেজবাহ উদ্দিন, আসমা আশরাফ, বেগম মোকাররম, মো. আব্দুল লতিফ এলকেন, পারভেজ শেখ হৃদয়, মো. কামরুল হক, মো. শাহাবুদ্দিন, মো. সাইদুর রহমান সাগর, মো. ইলিয়াস, মো. দুলু।
উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জহুরুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, দফতর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম দফতর সমরেশ মন্ডল মানিক।
টাঙ্গাইল জেলা নেতাদের শুভেচ্ছা
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির নবগঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।
আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম চাকলাদার ও সদস্য সচিব মোজাম্মেল হক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের হাতে পুস্পস্তবক তুলে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহিম সুমন, দেলোয়ার হোসেন খান মিলন, আব্দুস সাত্তার গালিব, কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল রহমান, রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা নাজমুল হাসান রেজা, জেলা নেতা তোফাজ্জল হোসেন, খন্দকার মনোয়ার, মো. ইব্রাহিম মোল্লা, যুবরাজ, মাহফুজুর রহমান খোকা, মো. আশরাফ হোসেন, ইস্পাহানি, সবদের আলী মিয়া, আবুল কাশেম, ওস্তাগির, কায়সার রিজভী রিপন, আব্দুল আওয়াল, রোখসানা বেগম, আলমগীর হোসেন, মিজানুর রহমান, ইয়াকুব আলী, সার্জেন্ট আব্দুর রাজ্জাক, মোকাররম আলী, মোমিনুল ইসলাম মোমিন, মিজানুর রহমান।