আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে, রাজনীতি করতে আইনি বাধা নেই।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিজ মিলনায়তনে রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে আয়োজিত সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয় দুটি শর্তে—একটি হলো, বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন; আরেকটি হলো, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। রাজনীতি করতে পারবেন না, এমন কোনো শর্ত ছিল না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ, তিনি দণ্ডিত। রাজনীতি করতে পারবেন না, এরকম কথা তো কোথাও নেই। তবে, বাস্তব অবস্থা হলো—তার দণ্ডাদেশ সেটা স্থগিত করা হয়েছে। কারণ, তিনি অসুস্থ। এটা মনে রাখতে হবে। এখন বাস্তব অবস্থাটা কী, সেটাও আপনারা জানেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বাস্তব অবস্থা হচ্ছে—তার যে আবেদনটা, তার ভাই যে আবেদনটা করেছেন; সে আবেদনের মধ্যে বলা আছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার যদি আরও ভালো চিকিৎসা না হয়, তার জীবন বিপন্ন। যখন তাকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। যিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না, সেটা আমি বারবার আপনাদের বলছি। সেটা আপনারা দেখেন বিবেচনা করে। স্বাভাবিক মানুষ মনে করে, তিনি অসুস্থ, রাজনীতি করতে পারবেন না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ে অফিস করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, সেটা উনার বিষয়। আমি উনাকে কী পরামর্শ দেব! আইনি পরামর্শের প্রয়োজন হলে উনাদের আইনজীবীদের কাজে লাগাতে পারে। না হলে আমার কাছে চিঠি লিখুক।
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক চাপ নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রতি কোনো আন্তর্জাতিক চাপ নেই। জনগণের কাছে যে দায়বদ্ধতা আছে, সে দায়বদ্ধতা থেকে আমরা একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই।
তিনি বলেন, মানুষ যদি ম্যান্ডেট না দিত, তাহলে আমরা ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে সরকার চালাতে পারতাম না। জনগণের আমাদের প্রতি ম্যান্ডেট আছে বলেই আমরা সরকার চালাচ্ছি। আমরা হ্যাঁ-না ভোটের মতো নির্বাচন করব না। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নিরপেক্ষ হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংবিধানের এক চুলও বাইরে যাবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুল হক আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়মুক্তি দিতে চায় না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসনও চায়। তবে, সে প্রত্যাবাসন এখনো সম্ভব হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা মিয়ানমার ও তাদের জনগণের সমস্যা। তবে, এখন এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে। এই অঞ্চলে মাদক পাচার ও উগ্রবাদের ঝুঁকিও বাড়ছে। মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাচারও বাড়ছে। তবে, যেভাবেই হোক আমরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় নিজস্ব ভূমিতে ফেরাতে চাই।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন—পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ।