পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা জানিয়ে এমন মন্তব্য ও অভিযোগ করেন ফখরুল।
ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভয়াবহ একটি চক্রান্ত, একটি ষড়যন্ত্র এ দেশের বিরুদ্ধে, এই জাতির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এত সেনা কর্মকর্তাকে হারাতে হয়নি।’
ফখরুল বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতির জীবনে অত্যন্ত দুঃখজনক ও কলঙ্কজনক একটি দিন। এই দিনে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার পরিজনসহ হত্যা করা হয়। একটি ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
ঘটনার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এ ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, যেভাবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের এবং এর পেছনে যারা ছিলেন, তাদের বের করে নিয়ে আসার যে তদন্তপ্রক্রিয়া হওয়া দরকার ছিল; সেটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের এখানে সংঘটিত হয়নি। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সেনাবাহিনী একটা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। সেটার পূর্ণাঙ্গ যে চেহারা, এই চেহারা কিন্তু দেশবাসী জানতে পারেনি।’
ঘটনার বিচার কাজ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল। তিনি বলেন, প্রায় ৭ হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকেই সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ দাবি করেন। এখন পর্যন্ত তাদের মামলার শুনানি শেষ করা হয়নি। কারাগারে তারা ১৩-১৪ বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে দাবি করব, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, যে বিচারিক সমস্যাগুলো আছে, তা অতি দ্রুত সম্পাদন করে তাদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত। তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। তখন শুনেছিলাম সাধারণ ক্ষমাও করা হয়েছে। আমি আজকে দাবি করব, এ মানুষগুলোকে, তাদের পরিবারগুলোকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।’
‘বিডিআর বিদ্রোহে দিন খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল’- আওয়ামী লীগ নেতার এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা দায়িত্বহীন একটি মন্তব্য। বড় একটি ঘটনা, যেখানে সমস্ত জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে উনারা (আওয়ামী লীগ) মূল সমস্যায় না গিয়ে অন্যদিকে যেতে চান।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) ফখরুল আজম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহুরুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, মেজর (অব.) মো. হানিফ, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) কোহিনূর আলম নূর প্রমুখ।