যারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে এক করে দেখে, তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে অনেক কথা বলে, কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনাও করে; কেউ কেউ বলে দুই দল। এখানে একটা কথা বলতে চাই, ২০০৮ সালের সেই নির্বাচনের বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট ৩০০ সিটের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল, বিএনপির ছিল ২০ দলীয় জোট; বিএনপির নেতৃত্বে পেল ৩০ সিট আর বাকি আওয়ামী লীগ, তাহলে এই দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে? কীভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা চলে না?
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজের নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৫০০ স্থানে একসঙ্গে বোমা হামলা, ৬৩ জেলায় বোমা হামলা, দুর্নীতিতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়। ওরা মানুষকে কিছু দেয়নি; মানুষের অর্থ সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। এমন একটা রাজনৈতিক দল তারা তাদের নিজেদের গঠনতন্ত্র মানে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি আজকে কি একটা নেতাও পায় না যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি না? খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দুজনে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা সেই দলের নেতা, নিজেরা নিজেদের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না। সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না কীভাবে?
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, যে দলগুলো আছে; এরা কারা? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছেন। সেটা উচ্চ আদালতের রায় আছে। সেই সময় ক্ষমতা দখলকারী অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল, সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গলও চায় না। মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজে এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা ওই দুই বড় দল বলবেন তারাও ভুল করেন। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। এদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, স্বাধীনতার সুফল আজকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। ইনশাল্লাহ পৌঁছাবে।’
উপস্থিত জনতাদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের মাঝেই তো আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের এই স্নেহ-ভালোবাসাই আমার একমাত্র শক্তি। আপনাদের জন্য সবসময় দোয়া করি, আপনারাও দোয়া করবেন। এ বাংলাদেশকে যেন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি।’
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীরে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাজাহান খান, কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহাবুদ্দিন আজম বক্তব্য রাখেন।
এর আগে দুপুর ১২টা ৪০মিনিটে কোটালীপাড়ার জনসভা মাঠে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখান থেকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৪৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার শুরুতে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে কোটালীপাড়ায় আসেন।
জনসভাস্থলে ছুটেছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ: শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাট তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ খবরে কোটালীপাড়া মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর উদ্দীপনা। জনসভায় যোগ দিতে ভোর থেকে জনসভাস্থলে ছুটেছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ। ঘরের মেয়ে শেখ হাসিনাকে দেখেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রইলেন জনসভাস্থলে। এরপর দুপুরে আসলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্বাগত জানায় সমাবেশস্থলে আসা সাধারণ মানুষ। এরপর সেই মহেন্দ্রক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শুরু করলেন তার বক্তব্য। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন জনসভায় আসা সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ ৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে খুশি তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার বক্তব্য শেষ হবার পর করতালি আর স্লোগানে স্লোগানে ঘরের মেয়েকে অভিবাদন জানান। আগামী নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রী করবে এমন ইচ্ছা প্রকাশ করল জনসভায় আসা সাধারণ মানুষ। জনসভা শেষ হতেই আবারও ছোট-বড় নৌকা নিয়ে মিছিল করতে করতে বাড়ি ফিরলেন তারা। কোটালীপাড়ার মানুষ বার বার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের ভালবাসার প্রমাণ রেখেছেন। তাদের ভোটে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে কোটালীপাড়ায় আসবেন শেখ হাসিনা এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
বর্ণিল সাজ: দীর্ঘ ৪ বছর পর নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে সেজেছে। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কোটালীপাড়া। সড়কগুলোতে নির্মাণ করা হয় অসংখ্য তোরণ ও দুই পাশে টাঙানো হয়েছে ডিজিটাল পোস্টার-ব্যানার। ঘরের মেয়েকে এক নজর দেখতে আনন্দ-উদ্দীপনা বিরাজ করেছে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে শুধু কোটালীপাড়া বা গোপালগঞ্জই নয় এর আশপাশের জেলায় ও লাগে আমেজ। এ জনসভায় বরিশাল, মাদারীপুর, বাগেরহাট, নড়াইল, পিরোজপুর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়াতপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা: জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় যান। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে বঙ্গবন্ধু ও ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে পুরো জেলায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।