কপালে লম্বা লাল টিপ। মাথায় জটা। তার নীচ থেকে উঁকি দিচ্ছে সোনার টিকলি। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। পরনে গেরুয়া শাড়ি। ২৪ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় ১৯তম অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার সম্মেলনে ওই তরুণী ইংরেজিতে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন উপস্থিত সবাই নড়েচড়ে বসেছিলেন। ইনি কে? এ রকম সাজপোশাক কেন? কোন দেশেরই বা প্রতিনিধি? পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টের পর তরুণীর পরিচয় প্রকাশ্যে আসে। আর এতেই বেশ হইচই পড়ে যায়।
স্বঘোষিত হিন্দু ধর্মগুরু নিত্যানন্দের টুইটার অ্যাকাউন্টে ওই তরুণীর ছবি পোস্ট করে পরিচয় দেওয়া হয়। বলা হয়, ওই তরুণী হচ্ছেন ‘মা বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ’ এবং তিনি ‘নতুন দেশ’ কৈলাসের জাতিসংঘ প্রতিনিধি।
২০১৯ সালে নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং অপহরণের অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছিল। ওই সময় ভারতীয় পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে নিত্যানন্দ দাবি করেন, নিজের এক দেশ তৈরি করেছেন তিনি। নাম ‘ইউনাইটেড স্টেট অব কৈলাস’। সে দেশে সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। শুধু হিন্দুদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই দেশ। সেখানে হিন্দুদের সংস্কার, ঐতিহ্যকে লালন করা হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, ইকুয়েডরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপ কিনে নিয়েছেন নিত্যানন্দ। এটিকেই তিনি নতুন দেশ বলে দাবি করছেন। তবে এ ব্যাপারে ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পলাতক নিত্যানন্দের দাবি করা দেশটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কৈলাস’ হল একটি আন্দোলন যা, ‘কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের হিন্দু আদি শৈব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বা নির্যাতিত হিন্দুরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে এবং তাদের আধ্যাত্মিকতা, শিল্প এবং সংস্কৃতিকে অবমাননা, হস্তক্ষেপ ও সহিংসতা থেকে মুক্ত করে প্রকাশ করতে পারে।’
বৃহস্পতিবার টুইটারে ইউএসকে এর পক্ষ থেকে বিদেশিদের ই-নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য ই-ভিসা আহ্বান করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইউএসকে-এর পৃথক পতাকা, সংবিধান, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং পাসপোর্ট আছে। টুইটারে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘কৈলাস হচ্ছে আন্তর্জাতিক হিন্দু প্রবাসীদের আবাসস্থল এবং আশ্রয়স্থল।’
নিত্যানন্দ যা-ই দাবি করুন, তার তৈরি এই দেশের অস্তিত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আদৌ কৈলাসকে দেশের স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।