শেষ দুই বছরে জাতীয় দলের অপরিহার্য ক্রিকেটার হয়ে উঠা আফিফ হোসেনকে কী তাহলে বাতিলের খাতায় ফেলে দিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে? তার কথায় স্পষ্ট, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো না করলে আফিফের আরেকবার সুযোগ পাওয়া হচ্ছে না। ভালো করলে তার জায়গাও খোলা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি থেকে তাকে বাদ দেওয়ার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য নেওয়া হয়েছিল। যদিও একাদশে সুযোগ দেওয়া হয়নি। তৃতীয় ম্যাচে আবার বাতিলের খাতায় আফিফ। এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডেও তাকে রাখেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।
আফিফকে বাদ দেওয়ায় অনেকেই চমকে গিয়েছিল। শেষ দিকে গিয়ে দ্রুত রান তোলার কাজটা কঠিন। সেই কাজে আফিফ কখনো সফল হতেন। কখনো ব্যর্থ। কিন্তু বারবার সুযোগ পেয়ে আসছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কোচিং স্টাফরা তার উপর ভরসা রাখলেও খুব বেশি আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।
পারফরম্যান্সের কারণেই তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করলেন হাথুরুসিংহে। রোববার চট্টগ্রামে কোচ বলেছেন, ‘অবশ্যই (পারফরম্যান্সের কারণে বাদ)। তার চেহারার কারণে না, পারফরম্যান্সের জন্যই। যে কেউ বাদ পড়লেই পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়ে। কখনো কখনো আবার টেক্টিকাল কারণ যদি আমরা আলাদা কিছু করতে চাই, আলাদা কাউকে দেখতে চাই; এটাও কখনো কখনো কারণ হয়।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাকে খেলানো হয়নি। টানা ৬১ টি-টোয়েন্টি খেলার পর তাকে বাদ দেওয়া হয় যা বাংলাদেশের দলের ক্রিকেটারদের জন্য রেকর্ড হয়েছিল। টানা সুযোগ পেয়ে আফিফ কতটা কাজে লাগাতে পেরেছে সেটা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলা যায়। এ সময়ে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছিলেন। যেখানে তার পারফরম্যান্স আহামরি ভালো ছিল না।
৬২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে কেবল তিন ফিফটি করেছেন। ২১.২৫ গড়ে করেছেন ১০২০ রান। তবে স্ট্রাইক রেটটা ১২০.২৮ রেখেছে বড় প্রশ্ন। শেষ দিকে বড় রানের থেকে তার থেকে দ্রুত রান তোলার কাজটা চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু দলের ঝড় তোলার চাহিদা তাতে খুব একটা মেটেনি। সর্বশেষ ১২ ইনিংসে ১৯.৪০ গড় আর স্রেফ ১১৭.৫৭ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। সাত নম্বরে নেমে ঝড় তোলার যে চাহিদা সেটা মেটেনি তার ব্যাটে।
তবে ওই পজিশনে ব্যাটিং করা নিয়ে তার প্রবল আপত্তিও ছিল বলে শোনা যায়। এ নিয়ে কোচের সঙ্গে কথা বলেও প্রত্যাশিত সাড়া পাননি। আবার উপরে ব্যাটিংয়ে তার পরিসংখ্যানও যথেষ্ট নয়। ২০ ওভারের খেলায় ৪-এ খেলা আফিফের ১১ ইনিংসে ফিফটি আছে দুটি, ৩৩ গড়ে রান ৩০৩। ৫, ৬, ৭ ও ৮–এ খেলা আফিফের রেকর্ড সে তুলনায় ভালো নয়। ফিনিশারের দায়িত্বটা নাকি তিনি উপভোগই করেন না।
বর্তমানে জাতীয় দল যেভাবে আগাচ্ছে সেখানে আফিফের উপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ খুব একটা নেই। তবে পারফরম্যান্সের বিকল্প কিছু নেই তা বোঝা গেল হাথুরুসিংহের কথায়। সেটা যে পজিশনেই হোক না কেন। ভালো করলে তার আবার সুযোগ হবে হাথুরুসিংহের কথায় ছিল স্পষ্ট, ‘সে দলের বাইরে আছে এখন। তার এখন যা করা দরকার, তাই করতে হবে। গিয়ে রান করতে হবে। আমি তার সঙ্গে কিছু জায়গায় উন্নতির ব্যাপারে কথা বলেছি। যদি সে এটা করতে পারে, তাহলে যদি দলে কাউকে লাগে। তাহলে সবার মতোই সেও সুযোগ পাবে।’
আফিফের ভাগ্যে কী আছে তা সময়ই বলে দেবে। তবে প্রতিশ্রুতিশ্রীল ক্রিকেটারকে টিকে থাকতে হলে নিজের শেকল ভেঙে এগিয়ে আসতেই হবে।