মানুষ কষ্ট সইতে সইতে এখন পাথর হয়ে গেছে- মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন মানুষ কথা বলা শুরু করেছে, কয়জনকে তারা থামাবেন?
তিনি বলেন, যারা জনগণের কথা বলে, অভাবের কথা বলে, সত্য কথা বলে- তাদের যখন ধরে নেওয়া হয়, মামলা দেওয়া হয়; তখন আর কেউ ভবিষ্যতে কথা বলবে না। সত্য কথা বলার ও লেখার কারণে এ সরকারের আমলে শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ অনেক সাংবাদিককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
সারা দেশে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-আইইবি’র সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
ফখরুল বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা খুবই খারাপ। সেই খবর এবং ছবি ছাপানোর কারণে প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামস ও পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে শামসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, এখন আর সত্যি বলা বা লেখা যাবে না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, গতকাল নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, প্রয়োজনে আগাম নির্বাচন করা হবে। তাদেরকে হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত মানবে না। এই সরকার বর্তমানে মানুষের কথা, মানুষের কোনও মতামতকেই গুরুত্ব দেয় না। তাদের লক্ষ একটাই- ভোট চুরি করে আবারও ক্ষমতায় যাওয়া। কিন্তু এদেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এই সরকারের সময় নেই, তাই তারা ভয় পেয়ে আবোল-তাবোল বলছে। সাংবাদিকসহ বিএনপির অজস্র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করছে। অবৈধ এই সরকার দ্রুত পদত্যাগ না করলে হরতাল, ধর্মঘট শুরু হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেরা গাড়িতে আগুন দেবে, মানুষ মারবে। আর দোষ দেবে বিএনপির। দেশের মানুষ এখন এসব বোঝে। এসব আর করতে দেওয়া হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অবস্থা আজ যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এই রমজানের দিনেও মানুষ এমন কর্মসূচিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। মানুষের অভাবের কথা, দ্রব্যমূল্যের সত্যি কথা, লুটপাটের কথা এসব বলার কারণে সাংবাদিকরা আজ মামলার শিকার হচ্ছেন। এই দেশে ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরিব আরও গরিব।
মানুষের কোনও ব্যাপারে এই সরকারের দায় নেই বলে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। রাতের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে গত দুই বার। এবারও তাদের একটাই লক্ষ- যেকোনও মূল্যে আবারও ক্ষমতায় যাওয়া। সরকার তাদের অপকর্মের কথা, মানুষের অনটনের কথা এবং কোনও সমালোচনাই সহ্য করতে পারছে না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র কেবল জিয়াউর রহমানের আমলেই নিরাপদ ছিল। আজকে কোনও সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমই নিরাপদ নয়। সত্য কথা বললে বা লিখলেই ডিজিটাল আইনে মামলা হচ্ছে। সাংবাদিকরা গুম হচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন। এসব চলতে দেওয়া যায় না। আমরা সব সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। এর পাশাপাশি এই সরকারের পদত্যাগ চাই।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, এ সরকার জনগণের সরকার নয় বলেই আজ তারা জনগণের ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। জনগণের চাওয়া-পাওয়ার কোনও তোয়াক্কা তো করছেই না, উপরন্তু সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এই সরকার সে কারণে সাংবিধানিক নির্বাচনকে ভয় পায়। তারা দলীয়ভাবে নির্বাচন করে আবারও ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ সেটা কোনোভাবেই হতে দেবে না।