নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আগামী ২৪ এপ্রিল শপথ নেবেন। ওই দিন বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে শপথ পড়াবেন।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর কোনো দল প্রার্থী না দেওয়ায় তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী নির্বাচন কর্তা ও নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণা মোতাবেক মো. সাহাবুদ্দিন, পিতা মরহুম শরফুদ্দিন আনছারী, বাসা/হোল্ডিং-৮৮/১, গ্রাম/রাস্তা: শিবরামপুর, পাবনা পৌরসভা, ডাকঘর পাবনা, পোস্টকোড-৬৬০০, উপজেলা পাবনা সদর, জেলা পাবনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।’
নিয়ম অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের পর তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পর যথাসময়ে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শপথের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। আগের মেয়াদেও তিনিই এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে একবিংশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকে শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
স্বাধীনতার পর থেকে ২১ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৭ জন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে এ দায়িত্বে থাকতে পারেন।
মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্ক পাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম চুপপু। বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন পাবনার ঐতিহ্যবাহী এডওয়ার্ড কলেজে। সেখানেই রাজনীতির হাতেখড়ি। তার আগেই অবশ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাবনায় দেখা হয় সাহাবুদ্দিনের। ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি থেকে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন সাহাবুদ্দিন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।