ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা। পড়াশোনা করেছেন এমআইএসটি-তে। ২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণি পেয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। ভাইয়ের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন। বিয়ে করেন আনসার আল ইসলামের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেলকে। বিয়ের পর গভীরভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন ফাতেমা।
আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের মামলায় পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম শিখা এবং তার আশ্রয়দাতা আনসার আল ইসলামের সদস্য হুসনা আক্তারকে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (৮ এপ্রিল) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ আসামিদের আদালতে হাজির করে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে ফাতেমা তাসনীমের জঙ্গি কার্যক্রমের কথা উঠে এসেছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ফাতেমা তাসনীম পলাতক আসামিদের এবং হামলাকারী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
গ্রেপ্তার দুই আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফাতেমা তাসনীম ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। ভাই মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন। পরে সাইমনের মাধ্যমে আবু সিদ্দিক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর ফাতেমা তাসনীম আরও গভীরভাবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ব্লগার অভিজিৎ রায় ও নীলাদ্রি নিলয় এবং প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় ২০১৭ সালে আসামি হিসেবে সোহেল গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর থেকে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে কারাবন্দি সোহেলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শুরু করেন ফাতেমা তাসনীম।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় গত বছরের ২০ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। ফাতেমা তাসনীম এ কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। ব্লগার হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার সিজেএম আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসেবে ফাতেমা তাসনীমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয় করতে থাকেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভুয়া এনআইডি কার্ড ও মোবাইল ফোনের সিম সংগ্রহ করা হয়। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ঘটনার দিন ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল কেনেন। গত বছরের ১ নভেম্বর ফাতেমা তাসনীম ও আনসার আল ইসলামের অন্য সদস্য আদালত এলাকা রেকি করেন। ২০ নভেম্বর ভোরে ফাতেমা তাসনীম বাবাসহ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সিএমএম কোর্ট এলাকায় এসে তিনি কৌশলে বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মানসহ আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করতে থাকেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে ডেমরা থানা এলাকায় আনসার আল ইসলামের সদস্য হুসনা আক্তারের বাসায় গিয়ে অবস্থান করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ফাতেমা তাসনীম দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সোহেলসহ আরেক আসামি শামীমকে ছিনতাই করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন মর্মে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয় এবং অপর আসামি হুসনা আক্তার জ্ঞাতসারে জঙ্গি শিখাকে আশ্রয় দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই রাতে ২০ জঙ্গিকে আসামি করে মামলা করেন পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ।