চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত কয়েক সপ্তাহ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। গত মাসের শেষের দিক থেকে তাকে স্পেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের আতিথ্য করতে হয়েছে। হঠাৎ করে বিদেশি নেতাদের এভাবে বেইজিং সফরের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, করোনা মহামারির পর এবং ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অর্থনৈতিক ত্রাণকর্তা হিসেবে এখন অনেক ক্ষমতাধর দেশই চীনকে ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখছে।
শুক্রবার চীন যাওয়া রাষ্ট্রপ্রধানদের তালিকায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য তিনিও তার আগে ঘুরে যাওয়া অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের মতো রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করার ব্যাপারে চীনা উদ্যোগ জোরদার করার অনুরোধ জানাবেন শিকে।
তবে শি জিনপিং এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনে রশিয়ার আগ্রাসনের কোনো নিন্দা জানাননি। এরপরও বৈশ্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় চীনা দৃষ্টিভঙ্গি হাজিরের সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। জিনপিং এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা হাজির করতে চাচ্ছেন যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো খবরদারি থাকবে না। বিষয়টি গত কয়েক বছরে বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। এর ফলে যেসব রাষ্ট্রপ্রধান মার্কিন খবরদারি মানতে অনিচ্ছুক তারা সম্প্রতি চীনের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহযোগী অধ্যাপক লি মিংজিয়াং বলেছেন, ‘ (চীনা নেতা) বিশ্বাস করেন যে চীনের এখন কৌশলগত পরিকল্পনা করার সময় এসেছে। একটি সম্ভাব্য ভাল ফলাফল হচ্ছে, মার্কিন জোটকে দুর্বল করা … তাই আমরা দেখছি. বেইজিং ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে সম্পর্ক স্থিতিশীল এবং উন্নত করার চেষ্টা করছে এবং উদীয়মান অর্থনীতির সাথে সহযোগিতার উন্নতি ও জোরদার করার চেষ্টা করার জন্য বেশ কঠোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
চীন-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ এবং তাইওয়ানকে বেইজিংয়ের ভয় দেখানো সত্ত্বেও বিশ্বনেতারা চীনের কাছে ভীড়ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের খোলামেলা সমালোচনা এবং বিরোধিতার পাশাপাশি বিশ্ব শক্তিকে কীভাবে পুনর্নির্মাণ করা যায় সে সম্পর্কে শি জিনপিং তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন।
গত মাসের শেষের দিকে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর সাথে কথা বলার সময় শি জিনপিং বলেছিলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে একসাথে ‘গুণ্ডামি, বিচ্ছিন্ন করা কিংবা শিল্প ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার বিষয়গুলোকে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করা উচিত। এছাড়া মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে চীনা প্রেসিডেন্ট পৃথক বৈঠকে ‘শীতল যুদ্ধের মানসিকতা এবং ব্লকের দ্বন্দ্বকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।