চীনের এশিয়া অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক বিশেষ দূত দেং শিজুন গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন। চীনা বিশেষ দূত সে সময় মিয়ানমারসহ আসিয়ানের বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেন।
চীনের এই বিশেষ দূতের সফর নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। এর মধ্যেই তার এই সফরের কারণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘চীনের বিশেষ দূত এসেছিলেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলতে। আমার সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল।’
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ফরেন সার্ভিস ডে উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মন্ত্রী।
ড. মোমেন জানান, ওয়াশিংটন সফরের আগে চীনা বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেটা ছিল সৌজন্য বৈঠক। তারা (চীন) অনেক দিন ধরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। তারা খুব সুন্দরভাবে কাজ করছে। আমরা সব সময়েই আশাবাদী তারা (রোহিঙ্গারা) ফেরত যাবে।
মন্ত্রী বলেন, তারা (চীন) রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্যাসিলেটেড করছে। আমরা আশাবাদী। তবে আগে দুবার ডেট দিয়ে ভেস্তে গেছে। তাই রোহিঙ্গারা কবে ফেরত যাবে, সেটা এখনই বলতে পারছি না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কূটনীতিকদের গৌরবময় অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, বিদেশের মাটিতে কূটনৈতিক সার্ভিসের লোভনীয় চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাদ দিয়ে জীবন-জীবিকা ও পরিবারের কথা চিন্তা না করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন- এ দেশের কূটনীতিকদের দেশ, দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী কূটনীতিকদের নাম সম্বলিত একটি সম্মাননা ফলক উন্মোচন করেন। সম্মাননা ফলকটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করা হবে।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন নবীন কূটনীতিক হিসেবে দেশের জন্য তাদের ভূমিকা তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে তিনি চাকরির পেনশনের এক তৃতীয়াংশ (প্রায় দশ লাখ টাকা) প্রদান করে তার প্রয়াত সহধর্মিণী মরিয়ম চৌধুরীর নামে একটি উৎসর্গকৃত তহবিল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এ তহবিলের নাম হবে ‘প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর প্রয়াত সম্মানিতা সহধর্মিণী মরিয়ম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা স্মৃতি তহবিল’। এ তহবিলের পরিচালনায় থাকবে ফরেন অফিস স্পাউস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা) এবং এ তহবিলের অর্থ থেকে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শনকারী কর্মচারী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সন্তানদের স্কুল সমাপনী পর্যন্ত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই সরবরাহ করা হবে।
অনুষ্ঠানে ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সহধর্মিণী সেলিনা মোমেন তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের জন্য কূটনীতিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে দেশের জন্য যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তা দেশের মানুষ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবসময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তিনি ফোসার ব্যবস্থাপনায় ‘প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর প্রয়াত সহধর্মিণী মরিয়ম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা স্মৃতি তহবিল’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার জন্য সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমান তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন কূটনীতিকদের সাহসিকতা এবং দেশের জন্য তাদের অবদান তুলে ধরেন। তিনিও তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থও ফরেন অফিস স্পাউস অ্যাসোসিয়েশনের তহবিলে দান করার ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম-কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।