মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানিতে দীর্ঘ দিন ধরে সিন্ডিকেটের কবলে আটকে আছে বাংলাদেশ। এ কারণে একাধিকবার বাংলাদেশিদের জন্য দেশটির বাজার খুলেও আবার বন্ধ হয়েছে। এবার অভিবাসনকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহির মাধ্যমে ‘নৈতিক’ করার প্রতিশ্রুতি দিলো ঢাকা ও কুয়ালালামপুর।
বুধবার (১০ মে) ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দেশের তৃতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসা, বিনিয়োগ, জ্বালানি, হালাল বাণিজ্য, পর্যটন ও সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, তথ্য ও প্রযুক্তি, শিপিংসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ও বৈঠকে উঠে আসে।
বৈঠকে নিয়মতান্ত্রিক, নিরাপদ এবং নৈতিক অভিবাসন বিষয়ে দুই দেশ আরও নিবিড়ভাবে কাজ করবে, যাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অভিবাসন খরচ কমানো যায়। এ ছাড়া মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতেও কাজ করবে দুই দেশ। বৈঠকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশংসা করেছে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মালয়েশিয়ার পক্ষ ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমহাসচিব দাতো নোরমান মুহামাদ।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ চায় না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কোনও ধরনের সিন্ডিকেট থাকুক। কিন্তু এ সিন্ডিকেটের পুরো বিষয়টি মালয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। বৈঠকে সিন্ডিকেটের বিষয়টি উল্লেখ করা না হলেও নৈতিক অভিবাসন কথাটা দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে– বাংলাদেশ শ্রম রপ্তানিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের মাধ্যমে সবার জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
দুই পক্ষ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য একমত, যাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। বৈঠকে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার বিনিয়োগের আহ্বান জানায়। মালয়েশিয়ার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পর্ক বাড়াতে দুই পক্ষই নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সফর বিষয়ে জোর দিয়েছে। এ সময়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে সুবিধাজনক সময়ে সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আসিয়ান জোটে কুয়ালালামপুরকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছে ঢাকা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে আসিয়ানের ডায়লগ পার্টনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতেও মালেয়শিয়ার সহযোগিতা চাওয়া হয়।