ডি বক্সের সামনে থেকে আলতো পাসে বল বাড়িয়ে দিলেন ফিল ফোডেন। বল পেয়েই বাঁ দিকে মাটি গড়ানো শটে কর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে জুলিয়ান আলভারেজ বল জড়িয়ে দেন জালে। রিয়াল মাদ্রিদের জালে ম্যানচেস্টার সিটির হালি গোল! যেন রীতিমত গোল উৎসব।
অথচ মিনিট খানেক আগেই বদলি নেমেছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন। গোলের কারিগরও বদলি নামা ফোডেন। অন্তিম মুহুর্তে যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে আলভারেজের ছোঁয়ায় হালি গোল পূর্ণ হলেও সিটির জয়ের নায়ক বার্নার্ডো সিলভা। এই পর্তুগীজ জোড়া গোল করেন। মাঝে মিলিতাওয়ের ভুলে রিয়াল একটি গোল হজম করে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মানেই রিয়াল মাদ্রিদের রাজত্ব। বুধবার রাতের পর অন্তত চলতি মৌসুমে এমনটা আর বলা যাচ্ছে না। ইতিহাদে ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে রিয়ালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সিটি। দুই লেগ মিলিয়ে গোলের ব্যবধান ৫-১।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম সফল দল ১৪বার ট্রফি জয়ী রিয়ালের বিদায় ঘণ্টা বাজলো সেমি ফাইনাল থেকে। গতবার এই রিয়ালের কাছে সেমিতে হেরে স্বপ্নের ইতি ঘটেছিল সিটির। এবার তাদেরই গুঁড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে পেপ গার্দিওয়ালার শিষ্যরা। ১০ জুন ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ট্রফির লড়াইয়ে ফাইনালের মহারণে মুখোমুখি হবে সিটি-ইন্টার মিলান।
ম্যাচের শুরু থেকে কতৃত্ব ধরে রাখে সিটি। প্রেসিং ফুটবলে রিয়ালকে তটস্থ রেখেছিলেন সিলভা-গ্রিলিশরা। দুই প্রান্তে সিলভা-গ্রিলিশ খেলেছেন দুর্দান্ত, অবিশ্বাস্য। তাদের থামাতেই রীতিমত হিমশিম খেয়েছে রিয়ালের রক্ষণভাগ। হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন আর্লিং হলান্ড। তার দুটি হেড ও একটি শট অনন্য দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন রিয়ালের দেয়াল কর্তোয়া।
প্রথমার্ধে হলান্ডের দুই হেড কর্তোয়া দেয়ালে বাধার মুখে পড়লেও সিভাকে আটকানো যায়নি। ২৭ মিনিটে ডি ব্রুইনা থেকে বল পেয়ে ডাক দিকে সিলভার বাঁ পায়ের জোরালো শট খুঁজে নেয় রিয়ালের জাল। কর্তোয়ার অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
১০ মিনিট পর আবারও সিলভার গোল! বাঁ দিক থেকে গ্রিলিশ বল বাড়িয়ে দেন গুন্ডোগানের দিকে। তার বাঁ পায়ের শট রুখে দেন মিলিতাও। কিন্তু বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি মিলিতাও। ডি বক্সেই শূন্যে ভাসা বল ফাঁকা পেয়েই দারুণ হেডে দ্বিতীয়বারের মতো বল জালে জড়িয়ে দেন সিলভা। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সিটি।
গোল হজমের পর রিয়ালের যেন হুশ ফেরে। খেলার গতি কিছুটা বাড়ে লস ব্লাংকোসদের। কিন্তু তাও লাভ হয় না। সিটির রক্ষণদূর্গে বারবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়। বিরতির পর কোনো দল গোলের দেখা পাচ্ছিল না। তখনি আত্মঘাতি গোল হজম করে রিয়াল। মাঝ মাঠের একটু সামনে থেকে ডি ব্রুইনার ফ্রি কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে উলটো বল নিজেদের জালে জড়ান মিলিতাও।
শেষ বাঁশি বাজার ১৪ মিনিট আগে তৃতীয় গোল হজম করে ম্যাচ থেকে এক প্রকার ছিটকে যায় রিয়াল। শেষ দিকে রিয়ালের একটি শট রুখে দেন অ্যাডারসন। এর আগে তিনি ক্রুজের বুলেট গতির শট বাঁচিয়েছিলেন অসাধারণ দক্ষতায়। রিয়াল শেষে গোলের দেখা না পেলেও আলভারেজ ভুল করেননি। ৮৯ মিনিটে মাঠে নেমে যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে (৯০+১) রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেন ৫ মাস আগে বিশ্বকাপ জয়ী এই আর্জেন্টাইন।
বার্নাব্যুতে প্রথম লেগে ১-১ গোলে ড্র করেছিল দুই দল। নিজেদের মাঠে এগিয়ে থাকতে না পারাটাই পিছিয়ে দেয় রিয়ালকে। অতিথি হয়ে এসে ইতিহাদে ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা রীতিমত বিধ্বস্ত হয়ে মাঠ ছেড়েছেন। বেনজেমা-রদ্রিগোরা ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। অন্যদিকে রক্ষন থেকে শুরু করে মাঝ মাঠ কিংবা আক্রমণভাগ; সিটির কতৃত্ব ছিল সবজায়গায়। ম্যাচে সিটি আক্রমণ করেছে ১৭টি আর রিয়াল ১০টি। বল দখলের লড়াইয়েও সিটির রাজত্ব। সিটির পায়ে বল ছিল ম্যাচের ৬০ শতাংশ সময়।