শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙা ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বাবা-মা হারা মানসিক প্রতিবন্ধী মেহনাজ মিরাকে। উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার প্রয়াত নুর মোস্তফা ও হাওয়া বেগম দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মেহনাজ। তার বর্তমান অবস্থার পেছনে দায়ী পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা আর উন্নত চিকিৎসার অভাব। চা বিক্রেতা ও নৈশপ্রহরী ভাই নিজের সংসার চালিয়ে অর্থসংকটে বোনকে চিকিৎসা করাতে না পেরে দীর্ঘ দিন ধরে শিকলবন্দি করে রেখেছেন। দীর্ঘ সময় শিকলে বন্দি থাকায় তার পায়ে ক্ষত হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হলেও সেটা তার লালনপালন ও চিকিৎসার জন্য অপ্রতুল।
মেহনাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট টিনের অপরিচ্ছন্ন কক্ষে শিকলবন্দি অবস্থায় শুয়ে আছে মেহনাজ মিরা। ঘরের সামনে ভাত ছিটানো। যে কক্ষে মেহনাজ থাকে সেটিও এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। দেখেই বোঝা যায়, এখানে একজন মানসিক অসুস্থ মেয়ে বাস করে। মিষ্টি চেহারার মেয়ে মেহনাজ কে দেখা যায় উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যে বয়সে তার বিয়ে করে ঘর সংসার করার কথা, সেখানে পায়ে শিকলবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তার বড় ভাই হাসান বলেন, ‘চিকিৎসার অভাবে ১২ বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় জীবন পার করছে আমার ছোট বোন। শিকলবন্দি থাকায় পায়ে ক্ষত হয়েছিল। এখন অন্য পায়ে শিকল লাগিয়েছি। আমি সামান্য নৈশপ্রহরীর কাজ করি। আমার তিন বাচ্চা আছে, তাই সব খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়।’
তিনি জানান, তার বোনকে শিকলবন্দি করে রাখা ছাড়া উপায় নেই। বেঁধে না রাখলে হারিয়ে যায়। এর আগেও কয়েক হারিয়ে গিয়েছিল। অনেক দূর থেকে তাকে ধরে আনা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, ‘আমরা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। তবে তার চিকিৎসার জন্য এই টাকা অপ্রতুল।’
এ ব্যাপারে শেরপুরের সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত হলাম। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।’