আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ‘লাল ফিতা’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি চাই কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেনো আর না থাকে।’
বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-ব্লিস ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রচলিত লাল ফিতা ধারণার অবসান হলে ব্যবসা বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে। দেশ আরও উন্নত হবে। আমাদের একটা মানসিকতা আছে যে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা; ভাবে যে আরেকটু টাইট দিতে পারলে বোধহয় সব ভালো হবে। সব সময় সেটা ভালো হয় না।’
‘দ্রুত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন- সেই নীতিতে আমি বিশ্বাস করি। আমি চাই কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেনো আর না থাকে। সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।’
দেশের চামড়া শিল্পকে আরও উন্নত করতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালেয়র অধীনে ‘চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ করার ঘোষণা দেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমরা চামড়া রপ্তানি করবো, সেইসাথে আমরা যেনো চামড়াজাত পন্য রপ্তানি করতে পারি। যেটা আমাদের জন্য মূল্যবান হবে, আরও বেশি আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারবো, সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করতে চাই। আমদানিজাত পণ্য যাতে দ্রুত খালাস করা যায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি এবং নেবো। বন্দরগুলোকে আমরা আরও উন্নত করছি। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সময় সুযোগের কথা বলা হয়েছে আমরা দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করবো।’
‘আমদানি ছাড়াও আমরা নিজেরা তৈরি করতে পারি কি না, বেকওয়ার্ড এবং ফরওয়ার্ড লিংকেজের বিষয়টা কিভাবে করা যায়, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেরা কিছু করতে পারি কি না সেটার দিকে নজর দিতে হবে। আমরা আমাদের দেশের নামে পণ্য বাজারজাত করতে পারি কি না সেটা এখন দেখতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘পরিবেশগত দিক বিবেচনায় টেনারি শিল্পকে আমরা সাভারে স্থানান্তর করেছি। সেটাকে আরও উন্নত করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করবো। চামড়া শিল্প উন্নয়নের জন্য ‘চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে করে দেবো- সেই ঘোষণা করছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে অঞ্চলভিক্তিক ট্যানারি শিল্প গড়ে তোলার কথা বলেন।
চামড়া শিল্পের জন্য সরকার ১০০ একর জমি বরাদ্দ দেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের নীতিমালা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব হবে ২০২৫ সালে। এটাকে আরও বেশি পাদুকা ছাড়া অন্যান্য পণ্যে ব্যবহার কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। ২০৩০ সালে যেনো ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়, সেটা আমি চাই।’
তিনি এ সময় চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প গড়ে তোলার জন্য অন্তত ১০০ একর জমি বরাদ্দের কথা বলেন। উদ্যোক্তাকে অগ্রাধিকার ভিক্তিতে বরাদ্দ দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।
সরকার সারা বিশ্বে নতুন বাজার খুজছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যকে তরান্বিত করার জন্য আমরা নতুন বাজার খুঁজছি। আমি যখন যে রাষ্ট্রে যাই সেই দেশের রাষ্টদূতের সঙ্গে বৈঠক করি। বৈঠক করে তাদেরকে আমি নির্দেশনাটা দেই এখানকার বাজার খোঁজার জন্য। তাদের বলি, এখন ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি, এখন আর পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি নেই। কোন কোন দেশে রপ্তানিটা বাড়ানো যায়, বা আমদানির ক্ষেত্রে কোন সুবিধাটা বেশি পেতে পারি, কোথায় কি চাহিদাটা বেশি, কোথায় কি দক্ষ জনশক্তিটা দরবকার সেটা আমরা খুঁজি।’
শ্রমিকদের পাওনা সঠিকভাবে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ আমাদের মূল শক্তি। এই জনগণের বড় অংশ হচ্ছে শ্রমিক। আপনারা তাদের, সেই শ্রমিকদের দিকে দৃষ্টি দেবেন। তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করার জন্য যতটুকু সুযোগ সুবিধা দেয়া যায় সেই ব্যবস্থাটা করবেন।’
ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনের যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এখন ইসরায়েল যেভাবে প্যালেস্টাইনের উপর অত্যাচার শুরু করেছে, ইতোমধ্যে তাদের অনেক জায়গা দখল করে রেখেছে। এখন অবরুদ্ধ আছে অনেক জায়গা। আমার অনুরোধ থাকবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ বন্ধ না করতে পারলে, আর এভাবে অস্ত্রের খেলা বন্ধ না করলে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে। আমরা শান্তি চাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিমালা খুবই স্পষ্ট- সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়। আমর সেই নীতিতেই এগিয়ে চলছি।’