বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় দুর্বিষহ দিন পার করছেন। এ তথ্য মালয়েশিয়ান সরকারের কাছে থাকা সত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার (২৫ অক্টোবর) প্রবাসী কর্মীদের দুরবস্থা এবং কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন এশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ অ্যাক্টিভিস্ট অ্যান্ডি হল।
একটু উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে শত শত বাংলাদেশির দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। একদিকে কর্ম নেই, অন্যদিকে ঋণের চাপে দিশেহারা এসব প্রবাসী। তারা যেন আধুনিক দাস।
অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধীনস্থ ওএইচসিএইচআর-কে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, মালয়েশিয়ায় চাকরিহীন ও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নোংরা পরিবেশে অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকছেন তারা। অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সামান্য খাবার এবং অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ঋণের বেড়াজালে পড়ে অসহায় দিন পার করছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা।
অ্যান্ডি হল বলেছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে ঘটতে পারে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব মালয়েশিয়ান সরকারের। তাছাড়া, অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগ আবেদনগুলো যদি সঠিক হয়, তাহলে দেশটিতে অতিরিক্ত শ্রমিক থাকার কথা নয়। সেক্ষেত্রে এমন মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতো না।
সম্প্রতি, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন ইসমাইল বলেছেন যে, অভিবাসী শ্রমিক নেওয়ার নীতিমালা শিথিল ও এর সুযোগ নেওয়ায় দেশটির কারখানা ও সেবা খাতে অতিরিক্ত আড়াই লাখের বেশি শ্রমিক রয়ে গেছেন।
একটি নথিভুক্ত অভিযোগের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যান্ডি হল বলেছেন, ৪০০ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের থাকার এবং খাবারের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান না থাকায় তারা স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একটি ঘরে প্রায় ১৪ জন আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছ থেকে ভিডিও পেয়েছি, যে এজেন্ট তাদের এখানে নিয়ে এসেছে, তারা তাদের প্রত্যেককে ২০০ টাকা দিয়েছে, যা তারা খাবার কেনার জন্য খরচ করছে। এটি তাদের বেশি দিন চলবে না।
ওই অধিকারকর্মী বলেছেন, শ্রমিকদের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে তাদের সম্পূর্ণ মজুরি পাওয়া উচিত এবং শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত।
তিনি বলেছেন, শ্রমিকদের কাছে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় পুলিশি ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। এমনকি তারা বাইরে কাজের সন্ধানে বের হতে পারে না।