দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি ও পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ভিসা ও কর্মহীন শত শত বাংলাদেশি মাসের পর মাস চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ঢাকার ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস’র মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন তারা- এমনটাই অভিযোগ করেছেন।
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (আরএল-১০৮৪)-এর মালিক মো. মাহফুজুর রহমান চলতি বছরে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট থেকে ছেড়ে দেয়। এরপর বাধ্য হয়ে এরা নিজেদের আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। এসব কর্মীদের ভিসা ও কাজ না থাকায় দিন দিন বাড়ছে হতাশা। অন্যদিকে, রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তা ফোন রিসিভ না করায় চোখে দেখছে সর্ষে ফুল। এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
এ ছাড়া, ফ্লাইটের কয়েক ঘণ্টা আগে বলা হয়, রিক্রুটিং এজেন্সির শেখানো কথা না বললে ‘পাসপোর্ট ও টিকিট না দেওয়ার’ ভয় দেখিয়ে এসব কর্মী থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হতো। এসব ম্যাক্সের নিজস্ব ক্যামেরায় ভিডিও ধারণও করা হয়।
সেখানে দেখা যায়, কর্মীরা বলতে বাধ্য হচ্ছেন ‘তারা ফ্রি ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ, থাকা ও খাওয়া নিজেরাই জোগাড় করবেন। এ ছাড়া, মেডিক্যালে আনফিট হয়ে দেশে ফিরলে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই দায়ী থাকবে না। এমনকি, মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মীরা যদি নিজেদের স্বীকারোক্তি অস্বীকার করে, তাহলে দেশে থাকা তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রিক্রুটিং এজেন্সি’।
যদিও মালয়েশিয়া বাংলাদেশ কর্মী নিয়োগ চুক্তি এমওএউ-তে উল্লেখ রয়েছে, প্রত্যেক কর্মীর কাজ, বাসস্থান, চিকিৎসা, ভিসা ফি ও যাতায়াত-ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে রিক্রুটিং এজেন্সি আর নিয়োগকর্তা।
এ ছাড়া, মালয়েশিয়ার শ্রম আইনানুযায়ী, যে কোম্পানির ভিসা সেই কোম্পানি ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করা গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলে ৩-৬ মাসের জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
প্রতারণার শিকার যশোরের জুনায়েদ সাকি, সাইফুল ইসলাম, বগুড়ার তাইজুল ইসলাম, কুমিল্লার শাহাদাত হোসেন, কক্সবাজারের আরমান, রাজশাহীর আরিফুল ইসলাম, মাগুরার সালেক উদ্দিন, নওগাঁর সাইদুল ইসলাম, নরসিংদীর সুমন, সিরাজগঞ্জের হাফিজুল ইসলাম, জামালপুরের তুহিন মিয়াসহ কয়েক শ ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মার্কেটের ভিসা দেবে বলে তাদের আনা হয়েছে। এখানে আসার পর তারা দেখেন, ভিসা তো দূরে থাক কথা-কাজের কোনও মিল নেই। এরওপর নিজেদের কাছে নেই পাসপোর্ট-ভিসা। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নিজস্ব ক্যামেরায় ধারণ করেন। এখন ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না। কারণ, কিছু বললে যদি দেশে থাকা পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো আইনের ব্যবস্থা নেয়?
শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস’র মালিক মাহফুজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে এ প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করেন, আপনাকে মালয়েশিয়ায় সাংবাদিকতা করার অনুমতি কে দিয়েছে, আপনি আমাকে চেনেন? এ ছাড়াও, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দেন তিনি।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার মিনিস্টার নাজমুস সাদাত সেলিম বলেন, মালয়েশিয়ায় ফ্রি ভিসা বলতে কিছু নেই। কর্মীদের থেকে এমন মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়া অবশ্যই মানবপাচারের মতো অপরাধ। অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।