উত্তর গাজায় নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে মাহমুদ আল-মাসরির জন্য একটি কঠিন কাজ ছিল: তার তিন ভাই এবং তাদের পাঁচ সন্তানকে কাছাকাছি একটি লেবুর বাগানে কবর দেওয়া।
তার বাড়ির এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায়, শোকাহত ৬০ বছর বয়সী এই কৃষকের অস্থায়ী কবর খনন করা এবং ইসরায়েলি হামলায় নিহত আত্মীয়দের দ্রুত বিদায় জানানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
মাসরি বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিককে বলেন, ‘আমাদেরকে বাগানে দাফন করতে হয়েছিল। কারণ কবরস্থানটি সীমান্ত অঞ্চলের ওই এলাকায় যেখানে ট্যাঙ্ক আসছে এবং এটি খুব বিপজ্জনক। যুদ্ধ শেষ হলে আমি তাদের দেহাবশেষ স্থানান্তর করব।’
৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল ব্যাপক হামলা শুরু করে। হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এতো মৃতদেহ দাফন করার মতো স্থান আর গাজার কবরস্থানগুলোতে নেই। ইসরায়েলি হুমকির কারণে উত্তর গাজার অধিকাংশ বাসিন্দাই দক্ষিণে পালিয়ে গেছে। বুধবার অনেকেই দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার পথে সড়কে লাশের পর লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। অথচ এই সড়কগুলোকে ইসরায়েলি বাহিনী ‘নিরাপদ’ বলে ঘোষণা দিয়েছিল।
মঙ্গলবার মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে, একজন নারী মহাসড়কে মৃতদেহ সম্পর্কে কথা বলেছেন।
ওই নারী জানান, তিনি তার ছেলেকে নেটজারিম মোড়ের কাছে খুঁজছিলেন। পরে অন্যদের মধ্যে তার লাশ রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন।
দক্ষিণ গাজার কবরস্থানগুলোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এখন ফুটবল মাঠে গণকবরে সমাহিত করতে হচ্ছে স্বজনদের। গণকবরের একপাশে পুরুষ এবং আরেক পাশে নারীদের রাখা হচ্ছে।
এএফপিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, মৃতদেহ দাফন করার আগে পুরুষরা কোদাল ও বেলচা ব্যবহার করে ফুটবল মাঠে একটি আয়তক্ষেত্রাকার গর্ত খনন করেছে। গর্তে পুরুষদের একদিকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং অন্য দিকে নারীদের ঢেউতোলা লোহার পাত উপরে স্থাপন করা হয়েছিল এবং তারপরে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছিল।
দাফনে সহায়তাকারী শিহতেহ নাসের বলেন, ‘আমরা মৃতদের ফুটবল মাঠে এবং অন্যান্য খালি জায়গায় দাফন করছি। কারণ কবরস্থানগুলো পূর্ণ।’