চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এখন পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট সৈকত এলাকায় শত শত দোকান বসিয়ে পুরো এলাকা দখল করে নিয়েছে। সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনের ফুলের বাগান উপড়ে ফেলেও তোলা হয়েছে দোকান। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) শত কোটি টাকা খরচ করে সৈকত এলাকার আধুনিকায়ন করলেও এখন পুরোটায় দখলবাজদের নিয়ন্ত্রণে। সিডিএ জানিয়েছে, খুব শিগগিরই বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সৈকত এলাকা উদ্ধার করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের পর্যটক আকর্ষণের প্রধান স্পট পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু, গত দুই বছরে আধুনিক সৈকত এলাকা পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। এখানে পর্যটক এসে দোকানের জন্য সমুদ্রের কাছে যাওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন না। যত্রতত্র দোকান, ব্যবসায়ীদের দ্বারা হয়রানিসহ নানা কারণে এই সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈকত এলাকা দখল করে প্রায় তিন শতাধিক ছোট-বড় দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে প্রথমে ৪০-৫০ হাজার টাকা এককালীন আদায় করা হয়। প্রতিদিন এসব দোকান থেকে চাঁদা নেওয়া হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। স্থানীয় দুটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এসব দোকান নির্মাণ ও দখল করে গত দুই বছরে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আবদুর রশিদ নামের একজন পর্যটক বলেন, পতেঙ্গা সৈকত এখন সমুদ্র পর্যটনের এলাকা নেই। এখানে দোকান বসিয়ে পুরো এলাকা দখল করে নিয়েছে দখলদাররা। এখানে এসে সমুদ্র দেখার কোনো সুযোগ নেই। সবই শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।’
সাবরিনা সুলতানা নামের অপর এক পর্যটক বলেন, এখানে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গড়ে তোলা ফুলের বাগানের ওপরও দোকান নির্মাণ করেছেন দখলদাররা। পুরো সমুদ্র সৈকত এলাকার কোথাও একটু স্বস্তি নিয়ে ঘুরে দেখার সুযোগ নেই। সবই দোকান।
সৈকত এলাকা দখল হয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন পতেঙ্গা সৈকত এলাকার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, সাম্প্রতি স্থানীয় কয়েকটি সিন্ডিকেট সৈকত এলাকা দখল করে শত শত দোকান নির্মাণ করেছে। অবৈধ দখলের কারণে এখন পর্যটকদের বেড়ানোর কোনো সুযোগই নেই। বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সৈকত এলাকা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্দয়ভাবে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করব। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিতভাবে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
অবৈধ দখল এবং চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবিরুল ইসলাম বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের অবৈধ দখল ও অবৈধ দোকানপাট নিয়ে আমাদেরও মাথাব্যথা আছে। এখানে কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব দোকান উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।