হোসনে আরা জেমী/টরোন্টো
পৃথিবীতে কবে কখন এতো বড় মানবিক বিপর্যয় এসেছিল জানি না। আমি জেনেছি গুগলের পাতায় তাও আবার ১০০ বছর আগের কথা। আমি যেখানে জন্মেছি সেই দেশটির নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ধুলো মাটি কাঁদায় বড় হয়ে প্রথম আমি ১৯৮৮ সালের বন্যায় বন্যার্তদের মাঝে কাজ করি। সেই থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার প্রবল ইচ্ছে থাকায় এখনো সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।এখন আমি যে দেশটিতে বাস করি তার নাম কানাডা। লিখছি আমি কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের টরোন্টো থেকে। কেমন আছি আমরা এখানে? আজ এপ্রিল ৫, ২০২০ আর কিছুক্ষণ পরে আর একটি দিনের সুচনা হবে। কেমন হবে সেই দিন! একদিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখন যেসব খবর পাচ্ছি বেশীর ভাগ সিনিয়র হোম আর লংট্রাম কেয়্যারে যারা থাকেন।সিনিয়র হোমে যারা থাকেন তাদের ছেলেমেয়েরা আলাদা থাকে নিজেদের সংসার নিয়ে। তাদের বাবামাদের দেখার কেউ নেই। উনারা নিজেদের বাড়ি গাড়ি বিক্রি করে চলে যান সরকারী কিংবা বেসরকারী এই সব প্রতিষ্ঠানে। সেখানে অনেক একসাথে থাকেন আনন্দে এবং সেখানে ২৪ ঘন্টা তাদের দেখাশোনার লোক থাকে।উনাদের সমবয়সীরাই তখন আপনজন।লংট্রাম কেয়ার সেখানে তারাই থাকেন যারা নিজে কিছু করতে পারেন না।
এখানে সবাইকে দেওয়া হয় স্বাস্থ সেবা সহ উন্নত জীবন ব্যবস্থা । আমি দেশে যাবার আগে এই চাকুরীটা ছেড়ে দিয়ে গেছি। আজ যখন এই লেখাটা লেখছি তখন হয়তো কেউ না কেউ আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে। গোটা বিশ্বে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে সেইসাথে মৃত্যুর সংখ্যাও। এযেন এক আজব খেলেয় মেতেছে এই অজানা শত্রু।খালি চোঁখে দেখা যায় না, ছোঁয়াও যায় না। এক একটি মৃত্যু খবর শুনি আর সেখানে আমি নিজেকে দেখতে পাই।কানাডা প্রশাসন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পরিস্হিতি সামাল দিতে । হাসপাতাল গুলোতে স্হান সংকুলান না হওয়াতে অস্হায়ী হাসাপাতাল তৈরী করছেন হাসপাতালের কাছাকাছি। তাই চিন্তা করছি কানাডার মতো উন্নত দেশের এই অবস্হা হলে, আমাদের বাংলাদেশের কি অবস্হা হবে !
সত্যি বলতে কি আমরা এখানে শান্তিতে নেই। হোম কেয়ারিন্টনে থেকে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে কিন্তু আমাকে কাজে যেতেই হচ্ছে।বিশ্বের প্রথম সারির দেশ গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় গাণিতিক বা জ্যামিতিক হিসেবে কাজ করছে না এবং সেই দিকেও কারো কোন আগ্রহ আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে আমার চোঁখ আটকে যাচ্ছে আমার বাংলাদেশর দিকে যেখানে রয়েছে আমার মা, ভাই, বোন, বন্ধু আর সেই সাথে অগুন্তি খেটে খাওয়া ভাইবোনেরা যারা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে উন্নতির শিখরে। কি করে আমার সোনার দেশ এই দুর্যোগ থেকে বাঁচবে?আজ যেভাবে চাকুরি বাঁচানোর জন্য, যে ঝুকি নিয়ে মানুষের ঢ্ল নেমেছে এর ভিতরে যে করোনার মত বিষধর সাপ নেই কে বলতে পারে।কাকে বলবো প্রথমে আল্লাহর কাছে প্রর্থনা কিছু একটা মিরাকল করো?তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকেই বলেছি আপনি আমাদের সাধারন মানুষকে বাঁচার ব্যবস্থা করুণ, দেখবেন এরাই একদিন আপনার অর্থনৈতিক হাতকে শক্তিশালী করবে। আমি হয়তো সেদিন নাও থাকতে পারি কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ সন্তানরা যেন দেখে যেতে পারে অদেখা শত্রু মুক্ত সোনার বাংলাদেশ।।